দুদকের ভুল মামলায় নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় জারি করা রুলের ওপর শুনানি আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন দুদক দিবসে শুনানিতে আদালত দুদক ও ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, জাহালমের ঘটনা আরেক জজমিয়া কিনা? সবাই মিলে নিরীহ জাহালমকে ফাঁসিয়ে আরামে আছেন আপনারা।
শুনানিতে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, প্রকৃত আসামি আবু সালেকের পরিবর্তে জাহালমকে ফাঁসানোর ক্ষেত্রে দুদক ও ব্র্যাক ব্যাংকের অনেকেই জড়িত। সবাই মিলে জাহালমকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আপনারা আরামে আছেন।
আজ দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ও ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী আসাদুজ্জামান। জাহালম ও তার ভাই শাহানূরও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জাহালমকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে শুধু দুদকের দায় নয়, ব্যাংকগুলোও সমানভাবে দায়ী। তিনি ব্রাক ও ইউসিবিএল ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার ১৬১ ধারায় দেয়া জবানবন্দি পড়ে শোনান।
আদালত বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহালমের বিষয়ে সনদ দিয়ে বললেন, সে সালেক নয় পাটকল শ্রমিক জাহালম। এরপরও দুদক সেটি আমলে নেয়নি। দুদকের ভুলের কারণে আজ জাহালমকে কারাভোগ করতে হয়েছে। তার জীবন থেকে মূল্যবান সময় চলে গেছে।
আদালত আরও বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা কেন পুলিশের উপপরিদর্শকের (এসআই) মতো কাজ করবেন? এত টাকা বেতন নিয়ে কেন মাছিমারা কেরানির মতো কাজ করবেন। যাদের আসামি হওয়ার কথা, তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। দুদক তো আর চুরি, ডাকাতির মামলার তদন্ত করে না। দুদক সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধের মামলার তদন্ত করে।
দুদকের আইনজীবী তখন আদালতকে বলেন, সংঘবদ্ধচক্র সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে। আদালত তখন বলেন, তদন্ত করা দুদকের দায়িত্ব। এই টাকা কোথায় গেল তা কি দুদক তদন্ত করেছে?
দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, স্থানীয় লোকজন যখন ২০১৪ সালে বললেন, জাহালমের শ্বশুর ঝালমুড়ি বিক্রেতা। শাশুড়ি একটা স্কুলের ঝাড়ুদার। জাহালম লেখাপড়া জানেন না। তখনো জাহালমের ব্যাপারে দুদকের কর্মকর্তারা কেন সন্দেহ করলেন না। কেন স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য আমলে নেয়া হলো না।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পাটকল শ্রমিক জাহালম কারাগার থেকে ছাড়া পান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন