গুজবে হঠাৎ করেই লবণের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে লবণের সংকট সৃষ্টি হয়েছে বল এমন খবরের সঙ্গে সঙ্গে লবণ ক্রেতাদের ধুম পড়ে যায়। লবণ কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, ‘লবণের দাম বেড়ে যাবে তাই আগেই কিনতে এসেছি।’ রাজধানীর কৃষি মার্কেট, কারওয়ার বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার, ধানমন্ডি বাজার ও বিভিন্ন সুপার শপ ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে হঠাৎ করে এভাবে লবণ ক্রয়ের কারণে অনেক ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারওয়ান বাজারে ধুমতি সল্টের ডিলার হাফিজুল ইসলাম রানা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘একটি গুজবের ওপরে ভর করে জনগণ হঠাৎ করে এভাবে লবণ কিনতে শুরু করেছে। আমরা পূর্বের দামেই লবণ বিক্রি করছি। এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই।’
আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমাদের দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য সাধারণ মানুষ ও খুচরা বিক্রেতারা ভীড় করে। দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের দোকানের সমস্ত লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। লবণের অর্ডার দেয়া হয়েছে লবণ বিকেলের মধ্যে চলে আসবে।’
রাজধানীর কারওয়ার বাজারে দেখা গেছে, খুচরা ক্রেতারা লবণের সংকট হয়েছে মনে করে কেজি কেজি লবণ কিনতে এসেছে। এমনই এক ক্রেতা সিরাজুম ইসলাম সিরাজ। তিনি কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দুপুরে বাসা থেকে স্ত্রী ফোন করে বললো লবণের দাম বেড়ে যাবে। আসার সময় ৫/১০ কেজি লবণ কিনে নিয়ে আসবে। তাই লবণ কিনতে এসেছি। তবে ৫ কেজির বেশি পায়নি। সব লবণ শেষ।’
হাতিরপুল কাঁচা বাজারে লবণ কিনতে আসা সামিনা জামির হক ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘টিভিতে খবর দেখে লবণ কিনতে এসেছি। যদি দাম বেড়ে যায় তাই আগেভাগে বেশি করে কিনে রাখছি।’
এদিকে রাজধানীর আগোরা, মিনা বাজার, স্বপ্ন ও ডেইলি সুপার শপসহ কয়েকটি সুপার শপ ঘুরে দেখা গেছে তাদের কাছেও লবণ কিনতে আসা অনেক ক্রেতারাই ফিরে যাচ্ছেন। সুপার শপগুলো দাবি করছে, শপে যে লবণ মজুদ ছিল দুপুরের মধ্যে সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধানমন্ডি স্বপ্ন সুপার শপের ম্যানেজার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকেই শপে আসা প্রায় সব ক্রেতারাই বেশি করে লবণ কিনছেন। এ কারণে আপাতত লবণ আর নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন অনেকে লবণ কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।’
রাজধানীর ফার্মগেটে আগোরা সুপার শপের স্টর কিপার মাহমুদ শেখ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমাদের সুপার শপে প্রায় ২০০ প্যাকেটের বেশি লবণ মজুদ ছিল কিন্তু সকাল থেকে সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। দুপুরের পরে নতুন করে আরও ৩০০ প্যাকেট আনলেও সেগুলোও খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।’
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ধরনের গুজব কেউ ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে বেশি মুনাফার লোভে বিভিন্ন বাজারে লবণ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে, এমন গুজবে সাধারণ মানুষ লবণ কিনতে ভিড় করছেন বিভিন্ন হাটবাজারে। আর দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীও লবণ গুদামজাত করতে শুরু করেছেন।’
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘লবণের মূল্য বেশি রাখার খবর পেয়ে অধিদফতরের ৬টি টিম রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ও দোকানগুলো অভিযান চালাচ্ছে। যারা লবণের দাম বেশি রাখবে আমরা তাদেরকে জরিমানা করে আইনের আওতায় আনবো।’
তিনি ব্রেকিংনিউজের মাধ্যমে ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি কোনও ক্রেতা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) বেশি দাম দিয়ে লবণ কেনেন তাহলে যথাযথ প্রমাণসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরাবর অভিযোগ দাখিল করলে আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এদিকে দেশে লবণের কোনও ঘাটতি নেই বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তারা বলছে, বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। সম্প্রতি লবণ নিয়ে একটি অসাধুচক্র বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে মুনাফা লোটার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি লবণের সংকট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই জানিয়ে সারা দেশের জেলা প্রশাসনকে অবহিত করানোর জন্য বিসিকের কার্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
লবনের দাম বেশি চাইলে সরাসরি ফোন দিন জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র: ফোনঃ ০২-৫৫০১৩২১৮ মোবাইল: ০১৭৭৭-৭৫৩৬৬৮, ই-মেইল: [email protected]
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিক জানায়, লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ ছিল সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মিলগুলোতে মজুদ রয়েছে। তবুও একটা মহল লবণ ঘাটতি সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে বর্তমানে দেশে লবণের কোন সংকট নেই- সারাদেশের প্রশাসনকে সেটি জানানো হয়েছে।
লবণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের জন্য বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৫৭৩৫০৫। যেকেউ এই নম্বরে কল করে তথ্য জানাতে পারবেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন