চট্টগ্রামে নির্বাচন অফিসে গ্রেফতার আতঙ্ক
রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইতোমধ্যেই নির্বাচন অফিসের ৮ কর্মচারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিইউ)।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি গ্রেফতার জয়নাল আবেদিনসহ ৩ কর্মচারীর তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম জোনের ২৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম বেরিয়ে আসে। পরে তাদের গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে নির্বাচন অফিসে চিঠি পাঠায় সিটিইউ।
অনুমতি সাপেক্ষে বুধবার ২ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাইয়ে দেয়ায় অভিযোগে আরও অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারের অপেক্ষায় সিটিইউ। এছাড়া এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই খবরে নির্বাচন অফিসে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সিটিইউ সূত্র জানায়, এনআইডি জালিয়াতিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী জয়নাল আবেদিন, মোস্তফা ফারুক ও শাহনূরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ৩০-৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালের নাম উঠে আসে।
জানা গেছে, জয়নালের জবানিতে ১৬ জন এবং মোস্তফার জবানিতে ১২ জন ও শাহানুরের জবানিতে ৬-৭ জনের নাম উঠে আসে। পরে তাদের গ্রেফতারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনুমতি চেয়ে গত ৬ অক্টোবর চিঠি দেন চট্টগ্রামের সিটিইউ।
এরই মধ্যে বুধবার নিজ কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের উচ্চমান সহকারী আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও মীরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেনকে।
তারা এখন রিমান্ডে আছেন। জালিয়াতির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে আর কারা জড়িত, যাদের নাম এসেছে জালিয়াতিতে তাদের ভূমিকাইবা কী ছিল এবং এর আগে গ্রেফতার আসামিদের দেয়া তথ্য যাচাই করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন অফিসের গ্রেফতার তিন কর্মচারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধানের পর বাকিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন অফিসের আরও বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্তরা পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
যারা গ্রেফতার : রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে এনআইডি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিন, তার বন্ধু বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়াকে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পলবী চাকমা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় পাঁচজনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। পরে জয়নালের তথ্যে ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুককে।
২২ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় জেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. শাহীন (২৯), মো. জাহিদ হাসান (৩৩) এবং পাভেল বড়ুয়াকে (২৮)। ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট পদে কর্মরত শাহনুর মিয়াকে গ্রেফতার করে দুদক।
তদন্তে দুদক : এ ঘটনায় নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এরা হলেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ, ঢাকা এনআইডি প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর, একই শাখার সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, ঢাকা আইডিইএ প্রকল্পে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত করতে গিয়ে আমরা আরও অনেকের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। তাদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন