আয়কর মেলার প্রথমদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে ভিড় করছেন করদাতা ও সেবা প্রার্থীরা। করদাতাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দিতে হচ্ছে। রিটার্ন জমা দেয়ার পাশাপাশি কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতেও মেলায় ভিড় করছেন করদাতারা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টায় মেলা শুরু হওয়ার আগেই করদাতা ও সেবাপ্রার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের ভিড়। তবে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গেছে রিটার্ন জমা দেয়ার স্থানে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্ন জমা দেয়ার স্থানে কয়েকশ মানুষের লাইন দেখা যায়।
করসেবা প্রদান ও কর সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর- স্লোগানে এবার রাজধানীতে কর মেলা বসেছে অফিসার্স ক্লাবে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।
এনবিআর জানায়, এবারের মেলায় হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন বুথ ও ই-পেমেন্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ই-টিন জোন ও রিটার্ন পূরণের স্থান। মেলা প্রাঙ্গণে এবার ৩৯টি হেল্প ডেস্ক করা হয়ছে, যা গত বছর ছিল ৩৩টি। রিটার্ন বুথ রাখা হয়েছে ৫২টি, যা গত বছর ছিল ৪৯টি। আর ই-পেমেন্ট বুথ করা হয়েছে ১৪টি, যা গত বছর ছিল ১টি।
বুথের সংখা বাড়ানো হলেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে করদাতাদের কর দিতে হচ্ছে। মূলত ওয়ার্কিং ডে (অফিস খোলা থাকা) হওয়ায় করদাতাদের একটি বড় অংশ সকালেই কর দিতে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করে। এ কারণে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণ এক প্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
মেলায় আগতরা জানান, কর দিতে কী কী করতে হবে তা মেলা প্রাঙ্গণের হেল্প ডেস্ক থেকে জেনে নেয়া যাচ্ছে। যারা নতুন করদাতা তাদেরকে প্রথমে ই-টিন খোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই ই-টিন খোলা যাচ্ছে। ই-টিন খোলার পর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও বেতনের স্টেটমেন্ট নিয়ে এসে ফরমপূরণ করে আয়কর দেয়া যাচ্ছে।
মেলা প্রাঙ্গণে কর দিতে আসা আনোয়ার নামের একজন বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে এখানে এসেছি। আমি আগেও কর দিয়েছি। তাই কী করতে হবে জানা ছিল। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতে এসে দেখি দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়েছি আধা ঘণ্টার ওপরে। সামনে আরও ২০-৩০ জনের মতো আছে। মনে হচ্ছে আরও আধা ঘণ্টার মতো লাগবে।
তিনি বলেন, সময় একটু বেশি লাগলেও আজ কর দিয়ে যাব। এতে এক বছরের মতো আর টেনশন থাকবে না। তাছাড়া মেলায় কর দেয়া তুলনামূলক সহজ। এখানে কর দিতে কোনো হয়রানি হতে হয়না। কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আছে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করা যায়।
ফয়সাল নামের একজন বলেন, কর দেয়ার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে সব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ফরম পূরণে ভুল হচ্ছে কিনা সন্দেহ হলেই সেটা হেল্প ডেস্ক থেকে দেখিয়ে নেয়া যাচ্ছে। গত বছরও মেলা প্রাঙ্গণে এসে কর দিয়েছি। কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। আশা করছি এবারও কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে সকালে এসেও এবার মেলা প্রাঙ্গণে অনেক ভিড় দেখছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর মেলার প্রথম দিন সকালে এতো ভিড় ছিল না। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার অনেক ভিড় ছিল। এ কারণে এবার মেলার প্রথম দিনই কর দিতে এসেছি। ভেবেছিলাম অল্পকিছু সময় লাইনে দাঁড়িয়েই কাজ শেষ করতে পারবো। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতে এসে দেখি আমার সামনে প্রায় এক’শ মানুষ লাইনে আছেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমজাদ হোসেন নামের একজন বলেন, আমি মতিঝিলের একটি অফিসে কাজ করি। আজ অফিস আছে। তাই অফিসে যাওয়ার আগেই কর দিতে এসেছি। মেলায় কর দিতে কোনো ভোগান্তি হয় না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন