ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের বাবা মদিনায় আড়াই বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে উটের খামার। ২০০৪ সালে এখানে গেড়ে ওঠে এই খামার। ঈদুল আজহার সময় ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট থেকে একটি পুরুষ ও নয়টি মাদি উট বাবে মদিনায় পালনের উদ্দেশ্যে কিনে আনা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় আরও নয়টি উট ক্রয় করা হয়। এসব উট বাচ্চা প্রসব করলে এক বছরের মধ্যে এখানে উটের সংখ্যা দাঁড়ায় পঁয়তাল্লিশে। বিভিন্ন সময় ঈদুল আজহায় বাবে মদিনা উট বিক্রি করে থাকে।
খামারে প্রথম বাচ্চা প্রসব
অতিরিক্ত বৃষ্টির দিন উটের জন্য প্রতিকূল আবহাওয়া। কিন্তু ২০০৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এমনই এক দিনে জন্ম নেয় খামারের প্রথম বাচ্চা।
বাংলাদেশে উট পালন
এ দেশে উট পালনের প্রধান শর্ত হলো নিবিড় পরিচর্যা। জনালেন উট খামারের তত্ত্বাবধায়ক মো. তসলিম উদ্দিন। কি ধরনের পরিচর্যা? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করতে হবে। ব্যাপকহারে মশা-মাছি নিধনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে কোনোভাবে একটি মশা কিংবা মাছিও না থাকে। মলমূত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নোংরা পরিবেশ উটের প্রধান শত্রু। একটি উটের জন্য কমপক্ষে দশ বর্গফুট জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
উট পালন কতটুকু লাভজনক
এ প্রসঙ্গে তসলিম উদ্দিন বলেন, উট পালন অত্যন্ত লাভজনক। কারণ একটি উটের বাচ্চা লালন-পালনে মাসে ব্যয় হয় পাঁচশত টাকা। অথচ দেড় বছরের মাথায় এই উটটির বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় কমপক্ষে দেড়লাখ টাকা। এ সময়ে এর প্রতিপালন ব্যয় নয় থেকে দশ হাজার টাকার বেশি নয়। অন্যদিকে দেড় বছর পর মা উট আরেকটি বাচ্চা দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি দুধ দেয়। উট প্রথমবার একটি বাচ্চা দেয়। দ্বিতীয়বার থেকে দুই থেকে ৩টি করে বাচ্চা দেয়। একটি উট ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এ সময়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি বাঁচ্চা দেয়।
উটের বিভিন্ন রোগবালাই
সাধারণত উটের চর্মরোগ ও জ্বর হয়। সাধারণ চিকিৎসায় তা ভালো করা সম্ভব। তসলিম উদ্দিন বলেন, উটের প্রধান শত্রু কৃমি। ছয় মাস পরপর ভ্যাকসিন দিলে কৃমি দমন হয়। তিনি জানান, একটি উট যে কোনো রোগ অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে আক্রান্ত হলেও অসুস্থ অবস্থায় কমপক্ষে দু’মাস বেঁচে থেকে। এ সময়ের মধ্যে এটিকে সারিয়ে তোলা বা জবাই করে মাংস বিক্রি করা যায়। ফলে রোগ বালাই সত্ত্বেও উট পালনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না।
উটের মাংস ও দুধের গুণাগুণ
জাতিসংঘ, সৌদি আরব ও ভারতের প্রাণিবিজ্ঞানীরা উটের মাংস ও দুধের ওপর গবেষণা চালিয়ে আবিষ্কার করেছেন, এতে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, নানা সংক্রমণ, পেটের আলসার, হাঁপানি, জন্ডিস, পাইলস, রক্তশূন্যতা, চর্মরোগসহ প্রায় ২০ ধরনের জটিল রোগ নিরাময় সম্ভব।
উটের দুধ
একটি উট দৈনিক ৮-১০ কেজি দুধ দেয়। এখানে বর্তমানে ৯টি উট দুধ দিচ্ছে বলে জানান, তত্ত্বাবধায়ক তসলিম উদ্দিন। প্রতি কেজি দুধের দাম ১৬০ টাকা।
উটের খাদ্য
বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খৈল, ভুসি, খড় ইত্যাদি।
আড়াই বিঘায় উট খামার
বাবে মদিনায় আড়াই বিঘা জায়গার ওপর চতুর্ভুজ আকৃতিতে গড়ে তোলা হয়েছে খামারের মধ্যকার অংশ। বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করে উটের বাস উপযোগী খামার তৈরি করা হয়েছে। ২০ জন লোক সার্বক্ষণিকভাবে উট পরিচর্যায় ব্যস্ত। দুজন পশু চিকিৎসক ২৯টি উটের চিকিৎসায় নিয়োজিত। খামার রক্ষণাবেক্ষণ করছে ২০টি স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রতিটি দলে রয়েছে ১০-১৫ জন করে স্বেচ্ছাসেবক। বাবে মদিনা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছে খামারটি।
তসলিম উদ্দিন জানান, খামারের পরিধি বৃদ্ধি ও উটের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। ঈদুল আজহায় উট বিক্রি ও সারা বছর দুধ বিক্রিই খামারের আয়ের একমাত্র উৎস।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন