কার্তিকের কুয়াশা জড়ানো ভোরে দূর থেকে যেন আবছায়া মনে হয় মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনটিকে। তবু শীত-গ্রীষ্ম বারো মাস প্রতিদিন প্রতিরাতে এই স্টেশনের বুক চিরে হাজারো মানুষকে আপন গন্তব্যে পৌঁছে দেয় ট্রেনগুলো। মধ্যরাতে ট্রেনের ঝক ঝকাঝক আওয়াজ আর লম্বা বাঁশির হুইসেলে জেগে উঠে ঘুমন্ত মন্দবাগ। ঘুম ভাঙে স্টেশনকে ঘিরে রাখা আশাপাশের জনবসতিগুলোরও।
সোমবার রাতেও যথারীতি জেগে উঠেছিল মন্দবাগ স্টেশন। তবে যাত্রীদের কোলাহলে নয়, বিমর্ষ চিৎকার আর আহাজারি নিয়ে। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রক্তে ভেজা নিথর দেহগুলো পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কেউ কেউ গভীর আঘাতের যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছেন। কারও কারও মুখে প্রিয়জন কিংবা সহযাত্রীকে খুঁজে না পাওয়ার বিলাপ।
মধ্যরাতের আকাশ ভারি করে তোলা এমন আহাজারিতে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে লোকজন চোখে ঘুম নিয়েও ছুটে আসছিল মন্দবাগ স্টেশনের দিকে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েও ক্ষত-বিক্ষত মানুষগুলোকে উদ্ধার করছিল। কেউ কেউ লাশগুলো ট্রেনের নিচ থেকে ট্রেনে বের করছিল। আশঙ্কজনক অবস্থায় অনেককেই দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল কেউ কেউ।
অদূরেই আধো আলোতে ফুটফুটে এক শিশুর শতচ্ছিন্ন শরীর চোখে পড়লো। আজ কি নিশ্চিন্তে কত গভীর ঘুমে ডুবে গেছে শিশুটির চাঞ্চল্য। কিন্তু না, চেনা যাচ্ছে না। চোখগুলোও অস্পষ্ট, মুখের আকৃতি বিকৃত, হাত-পায়েরও চিহ্ন নেই। শিশুটির শরীর যেন ফালি ফালি করে কাটা এক চাঁদ, রক্তাক্ত তরমুজ। না, মন্দবাগ স্টেশনের ভয়াবহ সেই ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্য আরও অনেকের মতো দ্বিখণ্ডিত দেহ নিয়ে পড়ে থাকা এই ফুটফুটে শিশুটির পরিচয় আমরা এখনও পাইনি।
উল্লেখ্য, সোমবার রাত পৌনে ৩টির দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেল স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। আহতদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সিগন্যাল অমান্য করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন