কিশোরগঞ্জ তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে অপেক্ষায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ (ইনসেটে কাঠুরিয়া কবিরাজ)
কিশোরগঞ্জ তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে অপেক্ষায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ (ইনসেটে কাঠুরিয়া কবিরাজ)
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানায় বিশাল আয়োজন করে মাইকে মাইকে ফুক দিলেন কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া। আর নানা রোগবালাই ও মসিবত থেকে উদ্ধার পেতে পানি ও তেল ভর্তি বোতল উঁচিয়ে ধরলেন পঞ্চাশ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ।
বাংলা সিনেমার আজগুবি ঘটনা-গল্পকে হার মানানো এ অপচিকিৎসার নাটক সারা দেশ, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে।
ভণ্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে এ ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে ওই কবিরাজরূপী সবুজ মিয়াকে আইনের আওতায় আনারও দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজের অনেকে।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুরের ঝাড়ফুকের আসরের নেপথ্যে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫ অক্টোবর সকালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার সাহেদল ইউনিয়নের এস আর ডি শামসুদ্দিন ভূঁইয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে ঝাড়ফুকের আসর আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন পার্শ্ববর্তী দাপুনিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম ও আবুল কাসেম।
অপরদিকে, শনিবার পাকুন্দিয়া থানার শুঁখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠের আসরের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন শুঁখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামি থিতু।
এ আসরে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ফিকুল ইসলাম রেণুও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর সকালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার সাহেদল ইউনিয়নের এস আর ডি শামসুদ্দিন ভূঁইয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে ঝাড়ফুঁক দিতে আসেন পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবেড় গ্রামের কথিত কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া। তার আগমন উপলক্ষে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিশাল মাঠ।
এ ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় শনিবার একই জেলার পাকুন্দিয়া থানার শুঁখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠে মঞ্চ তৈরি করে ঝাড়ফুঁকের আসর বসায় কথিত কবিরাজ সবুজ মিয়া।
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফিকুল ইসলাম রেণু ও শুঁখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামি থিতু মঞ্চে উপস্থিত থেকে তাকে সহায়তা প্রদান করেন।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে চর পলাশ মাঠে ৫০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল নিয়ে উপস্থিত হয়। অদৃশ্য প্রচার-প্রচারণার ফলে সেদিন কাক ডাকা ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ উপজেলা ও আশপাশের সব রাস্তা এসে মিশে যায় চর পলাশের ওই ফসলের মাঠে।
এ ব্যাপারে কথা হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিকুল ইসলাম রেণু দাবি করেন, তিনি এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতি সামাল দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-পরিবেশ শান্ত রাখতে এ আসরের মঞ্চে উঠেছিলেন।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান জানান, তিনি এ ধরনের আসরের খবর পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্ধ করতে খবর ও পুলিশ পাঠান। কিন্তু পুলিশ পৌঁছার আগেই ঝাড়ফুকের আসর দ্রুত শেষ করে কাঠুরিয়া কবিরাজ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, এ ঘটনা শুনে এবং মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য পাকুন্দিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন