বাংলাদেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়।
আজ (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'উসকানি দিয়ে ও মুখরোচক কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিপথে নিলে তা মেনে নেয়া হবে না। আর তাদের যদি এসব করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ তাদেরকেই জোগান দিতে হবে। নইলে সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পড়াশোনা নষ্ট করে স্ট্রাইক (কর্মবিরতি) করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন, অর্থ সরকার দেবে, সব রকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার করবে, সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে আর সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এটা কখনো হতে পারে না।'
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইদানিং দেখতে পাচ্ছি কোন কথা নাই বার্তা নাই, ব্যবস্থা নেয়ার পরও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ তুলছে। আমাদের আইন আছে কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে, আর সেটা যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে যে অভিযোগকারী ওই আইনে তার বিচার হয়। তার সাজাও হয়। এটা কিন্তু আইনে আছে। কাজেই যারা কথা বলছেন, তারা আইনগুলি ভালোভাবে দেখে নেবেন, সেটাই আমরা বলব। কারণ আমরাও তো ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনা করেই আসছি। এটাও তাদের ভুলে গেলে চলবে না।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অবান্তর: নওফেল
ওদিকে, সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শনিবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এখনও অর্থ ছাড় হয়নি, তাই উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অবান্তর। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে এখনও পর্যন্ত সরকারের একটি টাকাও খরচ হয় নাই, সেখানে কিভাবে আমরা বলতে পারি যে উপাচার্য অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন?’
নওফেল অভিযোগ করে বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে। আন্দোলনের নামে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার সম্পর্কে আমরা সজাগ আছি। একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে নিজেদের রাজনীতি করছে। ওনারা অভিযোগ করেছেন আমরা সে অভিযোগ পেয়েছি। ন্যায়বিচার করতে হলে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। অভিযোগ করেই তারা ভিসির অপসারণ চাচ্ছেন। এখন ভিসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়ার পরও তারা কেন ক্যাম্পাস ছাড়েনি? কেন তারা একজন সম্মানিত শিক্ষকের বাসভবনের সামনে সারারাত কনসার্ট করেছে? তার পুরো পরিবারকে জিম্মি করে রেখে একটি অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একজন নারীকে বারবার অবমাননা করা হচ্ছে। যারা এমনটা করছে তাদের ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি।’
উল্লেখ্য, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত মঙ্গলবার উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। এর প্রেক্ষিতে ওইদিন সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ সব ধরনের মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে উপাচার্য অপসারণের এক দফা দাবি নিয়ে এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছেন শিক্ষকরা
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা প্রমাণাদি জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিব আব্দুল আলীম খানের বনশ্রীর বসভবনে এসব প্রমাণাদি জমা দেন শিক্ষক প্রতিনিধিদল।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সকল কাগজ, অডিও-ভিডিও আমরা শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় পরিবর্তন আসবে।
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন