রংপুরের কাউনিয়ার ১১৯ বছর বয়সের তিস্তা রেলসেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল একশো বছর। বিগত ১৮ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও লালমনিরহাট রেল ডিভিশনের ১৮টি ট্রেন জোড়াতালি দিয়ে এই সেতু পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক মেইল, লোকাল ও একটি আন্তঃনগর ট্রেন। সম্প্রতি যোগ হয়েছে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। মেয়াদোত্তীর্ণ এই সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণে সরকারি পরিকল্পনা থাকলেও নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অবশ্য বলছে, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এনিয়ে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের সঙ্গে রংপুর হয়ে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে ১৯০১ সালে তিস্তা নদীর উপর ২ হাজার ১১০ ফুট লম্বা এই তিস্তা রেলসেতু নির্মাণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সে সময় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু হিসেবে এটির ব্যাপক পরিচিতি ছিল। সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকা এবং দক্ষিণ পাশ যুক্ত হয়েছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সঙ্গে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেতুটিতে মিত্রবাহিনী বোমবিং করায় কাউনিয়া প্রান্তের একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে মেরামতের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। সে থেকেই সেতু ওপর দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। মাত্রাতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাকও পাথরের ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। ২০০১ সালে রেলসেতুর পূর্ব পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন। আর সড়ক সেতু চালু হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা বেশ নাজুক। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটির উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রেলের সাধারণযাত্রী ও অভিজ্ঞ মহল।
তিস্তা পাড়ের রাজেন্দ্র বাজার গ্রামের আলম মিয়া, মোকছেদুল হক ও দোয়েল খানসহ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, তিস্তা রেল সেতুটির ওপর ট্রেন উঠলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো নামমাত্র মেরামতের কাজ হলেও সেতুটির কোনো উন্নতি ঘটেনি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আল-ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিস্তা সেতু মেরামত করা হয়েছে। এখন সেতুতে ট্রেন চলাচলের সহনশীল। আমরা একে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু বলতে পারিনা। যাত্রীদের আতঙ্কের ব্যাপারটি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করবো।
বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ম্যানেজার মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, তিস্তা রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও এর পশ্চিম পাশে নতুন করে আরও একটি ডাবল ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন