চীনের মধ্যস্থতায় নতুন উদ্যোগের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আলোর আভাস দেখা দিয়েছিল। মিয়ানমারের স্বেচ্ছাচারে দুই দফা ব্যর্থ হওয়ার পর চীনের সংযুক্ততায় প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে ত্রিদেশীয় বৈঠকও হয়নি। চলতি অক্টোবরে বৈঠকটি হওয়ার কথা থাকলেও এখনো নির্ধারিত হয়নি তারিখ। এদিকে রাখাইনে ফেরাতে বাংলাদেশের দেয়া এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই সারা মিয়ানমার। ফলে বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি আবারো ঝুলে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এমতাবস্থায় মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া বিকল্প নেই। তবে চীনের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকটি দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে বলেই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সবশেষ গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও ‘রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী না হওয়ায়’ প্রত্যাবাসন শুরুর দ্বিতীয় চেষ্টা ঝুলে যায় অনিশ্চয়তায়। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর একইভাবে প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি নিয়ে দিনভর অপেক্ষা করার পরও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা তৈরি না হওয়ায় সেই চেষ্টাও ভেস্তে যায়।
তবে দ্বিতীয় দফায় চীন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করার কথা বলা হয়। এরপরও দুই বছর ধরে চলা এই সংকট সমাধানের দ্বিতীয় দফা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে পড়ে। সেসময় বাংলাদেশের ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজভূমে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি শর্ত জুড়ে দেয়।
তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মিয়ানমারের ঘনিষ্ট রাষ্ট্র চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কিছুটা সক্রিয় হওয়ার পর বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠক অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক বৈঠকে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের বিষয়ে একমত হন। কিন্তু চলতি মাস শেষ হতে চললেও বৈঠকটির তারিখও নির্ধারিত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত বলা যায়। কারণ এটা বাংলাদেশের হাতে নেই। এর বেশিরভাগই নির্ভর করছে মিয়ানমারের ওপর।’
‘কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। আবার দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেভাবে চাপ সৃষ্টি করার কথা, তারা তাও করছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছোট বা বড় যেকোনো ধরনের উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু রাতারাতি সমাধানের বিষয় নয় বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এ শিক্ষক। তার মতে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে চীনের দায়িত্ব নেয়ার দেশটি হয়তো কূটনৈতিকভাবে চেষ্টাও করছে।
এদিকে মিয়ানমারকে গত মঙ্গলবার আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১১ লাখ রোহিঙ্গা দুই বছরে বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হলো। এর আগে দেয়া হয়েছিল ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা।
গেল মঙ্গলবারের তালিকার আগে তিন দফায় মোট ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে দু-দফায় ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই শেষ করে আট হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত বলে জানিয়েছিল মিয়ানমার।
অন্যদিকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গার সম্পূর্ণ তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রত্যাবাসনের জন্য পুরো তালিকাই ধীরে ধীরে মিয়ানমারকে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন