আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যে বৈঠকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেখানেই তিনি যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই অঙ্গ সংগঠনগুলোয় চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা বড় নেতাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।
এর কয়েকদিন পরেই বিশেষ অভিযান শুরু করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-পুলিশের অভিযানে যুবলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়। এ সময় যুবলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত অবৈধ ক্যাসিনোসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানো হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ আনা হয়।
পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে। পাশাপাশি ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব।
পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করা হয় মতিঝিলের আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকেও।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে রাষ্ট্রীয় এলিট ফোর্স র্যাব। সংস্থাটির অভিযানে জব্দ হয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, চেক ও এফডিআর।
অভিযানের কবলে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা। অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য গ্রেফতার যুবলীগ ও কৃষকলীগের নেতাদের ‘আইকন’ বলছে র্যাব।
র্যাবের এ বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও সহ-সম্পাদক রুপন ভূইয়া এবং অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান।
বিশেষ অভিযানে র্যাব এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৮ কোটি ৪৫ লাখ নগদ অর্থ জব্দ করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। এ সময় জব্দ করা হয় প্রায় ৮ কেজি স্বর্ণ, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এছাড়া, অবৈধ ও বৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগে মোট ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযান সম্পর্কে সর্বোশেষ তথ্য জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেমেছে। অভিযানে র্যাব শতভাগ সফল। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন