ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে বলে সম্প্রতি একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। বিশেষ করে অবৈধ জুয়া ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে।
মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপকর্ম ও ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানে’ বারবার নাম এসেছে যুবলীগের। যুবলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, সংগঠনের কোনও সদস্য শৃংখলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বা নৈতিকতা পরিপন্থি আচরণের জন্য অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা।
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে প্রথম গ্রেফতার হন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া। গ্রেফতারের পরপরই তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ক্যাসিনো-কাণ্ডে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ঈসমাইল চৌধুরী সম্রাট। গ্রেফতারের পরপরই যুবলীগ থেকে জানানো হয় সম্রাট বহিষ্কার। সহ-সভাপতি আরমানও গ্রেফতার হন সম্রাটের সঙ্গে, তাকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তবে সর্বশেষ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভায় গ্রেফতারের বাইরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আনিসুর।
ক্যাসিনো-কাণ্ডে এ পর্যন্ত ১০ জনের বেশি গ্রেফতার হলেও অধরা ও সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়ে গেছেন অনেকে। তবে ক্যাসিনো-কাণ্ডে বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাম আসার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৯ নম্বরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। সাঈদ ক্যাসিনো ব্যবসায় সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত।
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারের বিরুদ্ধে। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা পারিচালনায় মমিনুল হক সাইদের সঙ্গী হিসেবে গণমাধ্যমে মোল্লা মো. আবু কাওসারেরও নাম উঠে এসেছে। তিনিও সাংগঠনিক দায়িত্বে স্বপদে বহাল রয়েছেন।
ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ যুবলীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান। তিনি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কৃত্রিমভাবে নিজের পোস্টারে ‘সুপার ইম্পোজের’ মাধ্যমে যুক্ত করে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সে কারণে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। পরে তাকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে পুনরায় অপকর্ম জড়িয়ে পড়েন। তিনিও সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন।
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাকসুদুর রহমান। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমি কোনও ক্যাসিনো কারবারে জড়িত নই। প্রধানমন্ত্রীর ছবি ‘সুপার ইম্পোজ’ করে নিজের পোস্টারে যুক্ত করে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আমার ভুল ছিল।’
২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন। তিনি এক সময় গুলিস্তান ফুটপাতের দোকানি ছিলেন। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গড়েছেন টাকার পাহাড়। তার অবৈধ আয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের আলী আহম্মেদের ডান হাত হওয়ায় ওই ক্লাবের ক্যাসিনো কারবারের টাকার ভাগও যেত শাহাবুদ্দিনের পকেটে। প্রতিদিন শাহাবুদ্দিন ২০ হাজার টাকা পেতেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোর বোর্ড থেকে। অভিযোগ থাকার পরও সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন শাহাবুদ্দিন।
যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পরও সাংগঠনিক দায়িত্বে বহাল তবিয়তে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণ হলে কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের মত করে ব্যবস্থা নেবে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন