বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গুমানতলি ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মুহিদ দাবি করেছেন, বখাটেদের অন্যায় আবদার রক্ষা না করায় পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল মুহিদ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে মাদরাসা পরিচালনা করে আসছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দারের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুর্যোগ প্রশমন ভবন পেয়েছি। শ্যামনগর-কালিগঞ্জ উপজেলার মধ্যে শুধু আমরাই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব পেয়েছি। এছাড়া ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি দুর্যোগকালীন গো-শালা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এলাকার কতিপয় বখাটে মাদরাসা চলাকালীন মাদরাসার মাঠ তাদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি তাদের নিষেধ করি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছিল। এ ঘটনায় ওই বখাটেরা দুর্যোগ প্রশমন ভবনের তালা লাগিয়ে দেয়। মাদরাসার সভাপতির হস্তক্ষেপে থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই তালা খোলা হয়। এ ঘটনায় আমি শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এরপর বখাটেরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে।’
মাওলানা আব্দুল মহিত আরও বলেন, ‘এরই জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর দুর্যোগ প্রশমন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি বলতে চেয়েছিলাম- বিগত খালেদা জিয়া সরকারের আমলে আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতা পাইনি। অথচ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে আমার প্রতিষ্ঠান অনেক কিছু পেয়েছে। কিন্তু আমি বক্তব্য শুরু করে খালেদা জিয়া বলার সঙ্গে সঙ্গেই ওই বখাটেরা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে হইচই শুরু করে। উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে উদ্যাত হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে তারা আমার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেয়। সেসময় মাদরাসার সভাপতি সাবেক এমপি এ কে ফজলুল হক তাদের ধমক দিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করেন।’
তিনি দাবি করে বলেন, বিষয়টিকে রঙচঙ মাখিয়ে বখাটেরা সাংবাদিকদের কাছে ভুল তথ্য সরবরাহ করে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কল্পকাহিনী। আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমি ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।
এদিকে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী সম্বোধন করে বক্তব্য দেয়ায় অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার মাদরাসা পরিচালনা কমিটির এক জরুরি সভায় অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মুহিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না মর্মে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার গুমনতলি ফাজিল মাদরাসায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি দুর্যোগ প্রশমন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬৪ জেলায় একযোগে এসব ভবন উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে ওই মাদরাসায় আয়োজিত আলোচনা সভায় অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মুহিদ খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন