সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে গত ৬ অক্টোবর মধ্যরাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। আবরারের দেয়া সেই স্ট্যাটাসসহ আরও বেশ কয়েকটি ভাইরাল হয়ে গেছে।
গত ৫ অক্টোবর বিকেলে দেয়া শেষ স্ট্যাটাসে এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এছাড়া ৬৮ হাজারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।
আবারের দেয়া সেই স্ট্যাটাসটি হলো-
‘১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।
৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আরেকটি স্ট্যাটাস দেন আববার। সেই স্ট্যাটাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এছাড়া সেটি শেয়ার করেছেন তিন হাজার নয়শ বার।
স্ট্যাটাসটি হলো-
‘কে বলে হিন্দুস্তান আমাদের কোন প্রতিদান দেয়না। এইযে ৫০০ টন ইলিশ পাওয়ামাত্র ফারাক্কা খুলে দিছে। এখন আমরা মনের সুখে পানি খাবো আর বেশি বেশি ইলিশ পালবো। ইনশাল্লাহ আগামী বছর এক্কেবারে ১০০১ টন ইলিশ পাঠাবো।’
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আরও একটি স্ট্যাটাস দেন আববার। ৮৬ হাজারের বেশি মানুষ তাতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং প্রায় দুই হাজার জন শেয়ার করেছেন স্ট্যাটাসটি। স্ট্যাটাসটিতে যা লিখেছেন আবরার-
‘একটা সময় ভাবতাম অনেক উচ্চশিক্ষিত একটা মেয়ে বিয়ে করব। তার অনেক গুণ থাকবে। কিন্তু একদিন আমি বুয়েটে চান্স পাইলাম। অতঃপর হলের ডাইনিং এ খাইতে গেলাম। এখন আমার একটাই ইচ্ছা- আমার বউ রান্না করতে পারলেই হবে।
#ignore_discrimination’
গত ২১ সেপ্টেম্বর আবরার একটি নিউজ শেয়ার করে লেখেন, ‘আমিও ইতিহাস গড়তে চাই।’ নিউজটা হলো, বিয়ে করতে শতাধিক কনে যাত্রী গেল বরের বাড়ি। তার সেই স্ট্যাটাসে ৩৮ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং অনেকেই তা শেয়ার করেছেন।
উল্লেখ্য, রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী, সিসিটিভি ফুটেজ ও আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, ফাহাদকে জেরা ও পেটানোর সময় হলের ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশাররফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় ফাহাদকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন। তারা সবাই মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আবরার হত্যার ঘটনায় গতকাল গ্রেফতার ১০ আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন