আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের যে দাবি তুলেছে, তার সাথে একমত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সমিতির ৩০০ সদস্য। একই সাথে তারা বুয়েট থেকে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ চান।
চলমান আন্দোলনে বুধবার দিনের শেষভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুম বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যথেষ্ট দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ পেয়েছি। আমরা শিক্ষক সমিতির ৩০০ সদস্য সকালে বসেছিলাম। তারা সকলেই ভিসির পদত্যাগের সাথে একমত পোষণ করেছেন। তিনি পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে ওনাকে অপসারণ করেন।
তিনি বলেন, ছাত্রদের এই দাবির সাথে আমরা একমত। ভিসি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। আজকের ঘটনা তার ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ। তাতে আমরা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।
সেই সাথে নিরাপত্তা দিতে না পারায় আবরারের পরিবারের কাছে আমরা ব্যর্থ শিক্ষক হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদের বলতে দ্বিধা নেই আমরা আপনাকে বাঁচাতে পারিনি এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর মিজানুর রহমান আবরার হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনি। সেদিন আবরারের লাশ সরানোর জন্য হত্যাকারীদের পক্ষ থেকে আমাকে চাপ দেয়া হয়েছে। আমি বলেছি ছেলেটি যেহেতু মারা গেছে ফলে এটি পুলিশ কেইস, আমি এই লাশ সরাতে পারবো না।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে র্যাগিং বিষয় তুলে ধরে তার প্রতিকারে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি ব্যর্থ নই এ পর্যন্ত অনেকবার বলেছি কোথাও র্যাগিংয়ের ঘটনা হলে আমাকে জানাতে। এমনকি আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের কোথাও দেখতে পেলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে বলেছি, তোমরা জানাওনি।
তিনি বলেন, তোমাদের সামষ্টিক সহযোগিতায় এবং শিক্ষক সমিতির সহ আমরা একযোগে কাজ করতে চাই। যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি একে এম মাসুদ বলেন, বৈঠকে আমরা আবরার হত্যার ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। হল থেকে সব বহিরাগতদের উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনে সরকার ও ট্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান করছি। তিনি বলেন, এটা আমরা বুঢেটের ভালোর জন্যই আমরা এমনটা দাবি জানাচ্ছি। অতীতে নির্যাতনের তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতেও আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
পাশাপাশি ওয়েবসাইটে অভিযোগ করার একটা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি আমরা। আজকের অবস্থা একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে কিচারহীনতায় আজকের এই পরিণতি।
শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষক সমিতি।
পাশাপাশি এডমিশন টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ নেই। আমরা আহবান করব প্রয়্জেনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন