সৌদি আরব থেকে আরও ১০৫ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সৌদি এয়ারলাইনস এসভি ৮০৪ ফ্লাইটে ৪২ জন ও বুধবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এসভি ৮০২ ফ্লাইটে ৬৩ জন দেশে ফিরেন। এ নিয়ে সৌদি আরব থেকে ধরপাকড়ের মুখে চলতি মাসেই দেশে ফিরলেন ৪৪১ জন কর্মী। এর আগে ৩ অক্টোবর ও ৪ অক্টোবর দুদিনের ব্যবধানে ২৫০ কর্মী সেদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এরপর ৫ অক্টোবর আরও ৮৬ জন সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফেরত আসা কর্মীদের বিমানবন্দরেরর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
ফিরে আসা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি আরবে বেশ কিছুদিন ধরে ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। সেই অভিযানে বাদ যাচ্ছে না বৈধ আকামাধারীরাও (কাজের অনুমতিপত্র)। ফেরত অনেক কর্মীর অভিযোগ— তারা কর্মস্থল থেকে বাসস্থানে ফেরার পথে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। সেসময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না। বরং আকামা থাকা সত্ত্বেও কর্মীদের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন অবৈধভাবে থাকার কারণেও অনেককে আটক করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
পিরোজপুরের শামীম দাবি করেন, মাত্র দেড় মাস আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে তিনি সৌদি আরব গিয়েছিলেন। কিন্তু আকামা থাকা সত্ত্বেও তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আরেক কর্মী মুন্সীগঞ্জের মহিউদ্দিন জানান, তিনি ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। আকামাসহ বৈধভাবেই ছিলেন। দুদিন আগে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার জন্য রুম থেকে বের হলে সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তিনি আকামা দেখালেও তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আটকের কারণ জানতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়।
শামীম ও মহিউদ্দিনের মতোই নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানান নোয়াখালীর সাইফুল, কুমিল্লার রাজু, ঢাকার রাসেলসহ আরও অনেকে। দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ— তাদের আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের ধরে সবজি, খেজুর ও পানি বিক্রিসহ ভিক্ষা করার মতো মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশে পাঠানো হচ্ছে।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘চলতি মাসেই দেশে ফিরলেন ৪৪১ কর্মী। এবছর ১০ থেকে ১১ হাজার কর্মীকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করলে কর্মীদের ফেরত পাঠানো হতো। কিন্তু এবার ফেরত আসা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, তাদের বৈধ আকামা ছিলে। আসলেই এমনটা হয়েছে কিনা, সেটা দূতাবাস ও মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখতে পারে। কেন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেই কারণটা বের করে করণীয় ঠিক করা উচিত। যেন নতুন করে যারা সৌদি আরবে যেতে চাইছেন তারা বিপদে না পড়েন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন