রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারে (বিসিএসআইআর) বিভিন্ন নিলাম নিয়ে চলছে একের পর এক নজিরবিহীন দুর্নীতি। রাজশাহীর ঠিকাদাররা এমন অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, রাজশাহী বিসিএসআইআরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাফিস হাসান সরাসরি এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। তার কারণে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। নাফিস হাসান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, সবকিছুই হয় নিয়মমাফিক।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার প্রাঙ্গণের উলুখড় নিলাম নিয়ে চলছে অনিয়মের চেষ্টা। সর্বোচ্চ দরদাতাকে উলুখড় না দিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাফিস হাসান। তবে সর্বোচ্চ দরদাতার বিরোধিতায় সে প্রক্রিয়া আটকে গেছে। সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারের নাম আনেয়ার হোসেন।
আনোয়ার জানান, এই মাসের শুরুতে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের উলুখড় নিলামে বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায়। নিলাম বক্স খোলার সময় ছিল একই দিন দুপুর সাড়ে ১২টা। এই নিলামে অংশ নিয়ে দরপত্রে তিনি তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এএসএম ট্রেডার্সের নামে উলুখড়ের মূল্য দেন এক লাখ টাকা।
দরপত্রের বক্স খুলে দেখা যায়, তার প্রতিষ্ঠানই সর্বোচ্চ দর দিয়েছে। এ ছাড়া মোট পাঁচজনের মধ্যে এক ব্যবসায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দেন ৮০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় ব্যক্তি জেআর এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শফিকুল ইসলাম দর দেন ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাফিস হাসান শফিকুল ইসলামকেই উলুখড় দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আনোয়ার বলেন, প্রতিবারই আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে নিলাম কমিটির সদস্য নাফিস হাসান শীর্ষ দরদাতাদের নির্বাচিত না করে কম দরদাতাকে নির্বাচন করেন। এজন্য বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দাঁড় করান। এবার তিনি বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করা না থাকার কারণে তাদের উলুখড় দেয়া যাচ্ছে না। অথচ তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতারও জাতীয় পরিচয়পত্র সত্যায়িত করা ছিল না। তিনি পরের দিন সত্যায়িত করে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে নিলাম প্রক্রিয়া আটকে গেছে।
আনোয়ার অভিযোগ করেন, গেল বছর তিনি ৭০ হাজার টাকায় নিলামে উলুখড় পেয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে নাফিস হাসান তার পছন্দের ব্যক্তিকে দিতে পারেননি। কিন্তু আনোয়ারও উলুখড় কেটে নিয়ে যেতে পারেননি। নিলামে সেগুলো পাওয়ার পরদিনই আগাছানাশক ছিটিয়ে উলুখড় নষ্ট করে দেয়া হয়। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান আনোয়ার।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের আমবাগানের নিলামের আয়োজন করা হয়। এতে এক বছরের জন্যই ১৪ লাখ টাকা দর দেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। কিন্তু নাফিস হাসানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি দর দেন সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। তাই বাগানের ইজারা পান আনোয়ার হোসেন। কিন্তু তিন মাসেও তাকে আমবাগান বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তিন মাস পর আম পেকে গেলে সেই নিলাম বাতিল ঘোষণা করা হয়। তারপর নাফিস হাসান স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি করেন। এই টাকা ইচ্ছেমতো লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এ বছর গোপনে আমবাগান ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে তিন বছরের জন্য মাত্র আট লাখ টাকায় আমবাগান ইজারা দেওয়া হয়েছে। অথচ আগেরবার এক বছরের জন্যই আমবাগানের ইজারা মূল্য উঠেছিল ১৪ লাখ টাকা। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাফিস হাসানের কারসাজিতে সেই নিলাম বাতিল হয়। এবারও তিনি গোপনে নিলামের ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাফিস হাসানের কারণে সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ঠিকাদারদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাফিস হাসান। তবে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানান। বলেন, গণমাধ্যমে কথা বলার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরিচালক ড. মো. ইব্রাহিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, নিলামের ব্যাপারগুলো একটা কমিটির মাধ্যমে হয়ে থাকে। সুতরাং তারা নীতিমালা অনুযায়ীই সবকিছু করে থাকে। এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন