এক বসায় দুইটি করে বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকের ‘সংখ্যা বাড়ানোর জন্য’ এমনটি করা হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজি দাবি করেছেন, তারা অডিট পর্যালোচনার গতিবৃদ্ধি করে অর্থ বছরের সঙ্গে সমান তালে চলার জন্যই বেশি বেশি বৈঠক করছেন। এজন্য একই দিনে একাধিক বৈঠক হচ্ছে। তবে একইদিনে একই ব্যক্তির একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের অন্যান্য কমিটি একদিনে একটি বৈঠক করলেও হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি একই দিনে বৈঠক করছে দুটি করে। কমিটির অষ্টম ও নবম বৈঠক গত ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার হয়েছে ১০তম ও ১১তম বৈঠক। পরবর্তী বৈঠকের সময় এখনও নির্ধারণ না হলেও ওই বৈঠকের দিনেও একইসঙ্গে দুটি বৈঠক হওয়ার সম্ভবনার কথা সংসদের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে।
বিগত দশম জাতীয় সংসদে কমিটিগুলোর বৈঠক পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ওই সংসদের ৫ বছরে সর্বোচ্চ ৬০টি করে বৈঠক করলেও ব্যতিক্রম ছিলো এই হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি ৫ বছরে ১০১টি বৈঠক করেছিল বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। ওই সময় কখনও একদিনে একটি আবার কখনও একই বসায় দুটি করে বৈঠক হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট কমিটি শাখা সূত্রে জানা গেছে। গতবারের ধারাবাহিকতায় এবারও হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি একই প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করছে।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তবে, হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয় কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বর্তমানে ২০১৯-২০ অর্থ বছর চলছে। অথচ অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনায় আমরা ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পড়ে আছি। এজন্য আমরা অর্থ বছরের সঙ্গে তালা মেলাতে বেশি করে মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে ফ্রি থাকলেও আমাদের কমিটির সদস্যদের আরও ব্যস্ততা রয়েছে। তারা বার বার আসতে পারেন না। যার কারণে যেদিন উনারা সময় দিতে পারছেন আমরা একাধিক বৈঠক করছি।
কমিটির সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, গতিশীলতার জন্যই দুটি করে বৈঠক করা হচ্ছে। এতে কমিটির বৈঠকের সংখ্যা বাড়বে এটা তো ভালো দিক। এরজন্য তো কমিটিতে বাহবা দেওয়া উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুটি করে বৈঠকের সঙ্গে যাতায়াত ভাতা বা সম্মানী ভাতা উত্তোলনের কোনও বিষয় নেই। তার জানা মতে সেই সুযোগ নেইও।
কমিটির সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটো) বলেন, আমাদের বৈঠকে আলোচ্যসূচিভিত্তিক বিভিন্ন দফতরের সম্মানিত কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকের মাঝখানে তাদের বের করে দিয়ে বৈঠক করা শোভনীয় দেখায় না। যার কারণে একটি বৈঠক শেষ করে দিতে আমরা নিজেরা আবার বসি। এ কারণেই দুটি করে বৈঠক হয়েছে। তবে, সবক্ষেত্রে একই দিনে দুটি বৈঠক হবে এমনটি নয়।
এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যরা যাতায়াত ভাত ও দৈনিকভাতা পেয়ে থাকেন। কোনও সংসদ সদস্য নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে এসে বৈঠকে অংশ নিয়ে সেই অনুযায়ী বিমান বা অন্যান্য যানবাহনের আসা যাওয়ার ভাড়া পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে আগে পরে মিলিয়ে ৫দিনের মতো নির্ধারিত হারে দৈনিক ভাতা পেয়ে থাকেন। অবশ্য সংসদ অধিবেশন চলমান থাকা ও না থাকার সময় এই ভাতার কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে, একইদিনে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণ দেখিয়ে ভাতা উত্তোলনের কোনও সুযোগ নেই।
সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ফিন্যান্স ও গণসংযোগ) স্বপন কুমার বড়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য সদস্যরা দৈনিক ভাতা ও যাতায়াত ভাতা পেয়ে থাকেন। এর কিছু নিয়ম ও হার রয়েছে। তবে, একইদিনে একাধিক বৈঠকে অংশ নিলে একাধিকবার ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই।
সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব (কমিটি-১) ফয়সাল মোর্শেদ বলেন, বৃহস্পতিবারের একটি বৈঠকে মূল এজেন্ডা ও অন্যটিতে মুজিববর্ষ পালনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটির আগামী বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও ওই বৈঠকের দিনে একই সময় দুটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান এই কমিটি অফিসার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন