‘রাইতে গুমাইতে (ঘুম) পারি না, গুমের মধ্যে ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেহি। বড় বড় তুফান (সাগরের ঢেউ) গায়ের উপরে পড়ে আর পানির তলে নিয়া যায়’- গত রবিবার তার মা টেলিফোনে কুশল জানতে চাইলে এমনটাই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সাগরবক্ষ থেকে ভারতীয় জেলে কতৃর্ক উদ্ধারকৃত কিশোর মো. ইমরান (১৪)। মায়ের একমাত্র সন্তান ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভোলাহাট থানার একটি শিশু যত্ন ও সুরক্ষা কেন্দ্রে হেফাজতে আছে। ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কিশোর মো. ইমরানের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী গ্রামে। সে চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
মো. ইমরানের সাথে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টেলিফোনে প্রতিনিধির কথা হয়। সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোলাহাট থানার ‘নূর আলী মেমোরিয়াল সোসাইটির’ একটি শিশু যত্ন ও সুরক্ষা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
হোমের সুপারিটেন্ডেন্ট রুম্পা মূখার্জী কালে কণ্ঠকে জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর জেলার রায়দিঘি থানার শিশু সুরক্ষা কমিটির মাধ্যমে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। তার যথাযথ সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি আদেশ পেলে তাকে দেশে পাঠান হবে।
মঙ্গলবার এ প্রতিনিধি ফোন করলে মো. ইমরান টেলিফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে লোমহর্ষক ১০ ঘণ্টার কাহিনি তুলে ধরে। সে জানায়, ‘রাইতে গুমাইতে (ঘুম) পারি না, রাইতে (রাতে) ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেহি। বড় বড় তুফান (সাগরের ঢেউ) গায়ের উপরে পরে ও পানির তলে নিয়া যায়’। দিগ্বিদিক হারা ইমরান বলে, ‘পরনের লুঙ্গির মধ্যে বাতাস ভরে প্রায় ১০ ঘণ্টা ভাসতে থাকি।' হাতে একটা ফ্লট (বাতাস ভর্তি ছোট প্লাস্টিক বল) ছিল। গায়ে ছিল একটি গেঞ্জি। সন্ধ্যার আগে দূরে একটা ট্রলার দেখে গেঞ্জি উড়িয়ে ইশারা দিলে ভারতীয় ট্রলার ‘এফবি বাবা পঞ্চানন’ এর চালক মনোরঞ্জন দাস তাকে উদ্ধার করে। জেলেরা চার দিন তাদের সাথে রেখে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার রায়দিঘি থানায় পৌঁছে দেয়। সাগরের বুকে ১০ ঘণ্টায় লোনা জলে শুধু খাবি খাচ্ছিল সে।
ইমরানের মা আসমা বেগম বলেন, রবিবার কথা বলেছি , ‘মায়ের কাছে যামু’ বলে ফোনে ইমরান শুধুই কান্না করে। জন্মের পর দুই বছর বয়স থেকে তার বাবার সাথে সর্ম্পক নেই। তাই অমিই তার সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। জানান, সাগরে ছেলের বেচেঁ থাকার ভয়ংকর কাহিনি শুনে তার আর কিছুই ভাল লাগছে না। বেচেঁ যেহেতু আছে তাকে দ্রুত দেশে আনার দাবি জানান তিনি।
পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী গত গত ২৪ আগস্ট অভিভাবকের অজান্তে তার নিজের নামে গড়া সাগরে নানার মাছ ধরার ট্রলার এফবি ইমরানে চড়ে অন্যান্য জেলেদের সাথে সাগরে চলে যায়। সেখান থেকে গভীর সাগরে ছিটকে পড়ে।
এ ব্যপারে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টম্বর) টেলিফোনে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাস এর প্রথম সচিব শামিমা ইয়াসমিনের সাথে টেলিফোনে কথা বলার জন্য চেষ্টা করলে বাপ্পা সরকার নামে একজনের মাধমে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, মো. ইমরান বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাকে দেশে পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন