মানবতার কারণে যে যুবক ২০১৭ সালের আগস্টপরবর্তী সময়ে টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের নিজ হাতে ঘরে রান্না করা খাবার তুলে দিয়েছিলেন, দুই বছরের মাথায় রোহিঙ্গাদের হাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সংঘটিত টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সীমান্তজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত জনপদের লোকজন বলছে, ‘মানবতা এখন পাল্টে গেছে।’
টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকার বিশিষ্ট জমিদার আব্দুল মোনাফ কোম্পানি তাঁর ছয় ছেলেকে নিয়ে ২০১৭ সালের আগস্টপরবর্তী রোহিঙ্গা ঢলে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। মোনাফ কোম্পানি তাঁর বিপুল সম্পত্তিজুড়ে নিজেরাই আশ্রয়শিবির তৈরি করে কয়েক হাজার ভাগ্যহত নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। মোনাফ কোম্পানির সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ছিলেন ওমর ফারুক।
জাদিমুরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওমর ফারুক তাঁর নিজ হাতে রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়েছেন ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর পৈতৃক সম্পত্তিতে আশ্রয়শিবির তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিয়েছিলেন। এমনকি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দেশি-বিদেশি সাহায্য পৌঁছার আগে তিনি প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে খাবার রান্না করে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। শেষ পর্যন্ত সেই রোহিঙ্গারাই তাঁকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ওমর ফারুকের বাবার কমপক্ষে ৮-১০ কানি (একর) জমি রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করেছে। সেখানে তাঁর একটি ইটভাটাও ছিল। সেটিও এখন রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে গিয়ে বন্ধ রয়েছে। এককথায় রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ মানবতা দেখিয়েছিল জাদিমুরার এ পরিবারটি। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা সেই খাতিরও দেখায়নি।’
গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে ওমর ফারুকের বাবা মোনাফ কোম্পানি বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘হায় পুত, তুই আমাদের রেখে কোথায় চলে গেলি? তুই না থাকলে গরিব-অসহায়দের কে মানবতা দেখাবে?’
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা অনেক মানবতা দেখিয়েছি। তারা এখন উল্টো স্থানীয়দের ওপর আক্রমণ করছে। রোহিঙ্গারা আমাদের সেই মানবতার কোনো মূল্য দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে সংকট আরো ঘনীভূত হবে।’
এদিকে ওমর ফারুক হত্যা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে ‘রোহিঙ্গা ভিশন’ নামে একটি অনলাইন টেলিভিশন। রোহিঙ্গাদের পরিচালিত ওই টেলিভিশন থেকে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশিরা এখন ক্ষিপ্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা শুরু করেছে। এ ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যমটি রোহিঙ্গাদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন