ধর্ষণ ও হত্যার শিকার জয়ন্তী চক্রবর্তী (বামে)। ধর্ষক ও হত্যাকারী জামাল হোসেন, আনিছুর রহমান।
চাঁদপুরে স্কুল শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এই হত্যায় জামাল হোসেন ও আনিছুর রহমান নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে চাঁদপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব জানান পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন শহরের ষোলঘর পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়ার্টারে শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী তার বাসভবনে একা অবস্থান করছিলেন। এ সময় ওই এলাকার ডিশের লাইনম্যান জামাল হোসেন ও ডিশ লাইনের মালিক আনিছুর রহমান মাদক সেবন করে সুকৌশলে ডিশের তার ঠিক করার কথা বলে জয়ন্তীর ঘরে ঢোকে।
পুলিশ জানায়, তারা উভয়ই তাকে ধর্ষণ করে এবং তা ধামাচাপা দিতে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের আটকে সমর্থ হয় বলে জানায় পিবিআই।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
আসামি জামাল হোসেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় এ ঘটনায় তার এবং সহযোগী আনিছুর রহমানের সম্পৃক্ততা জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
জামাল হোসেনের বরাত দিয়ে এসপি বলেন, জামালের বাবার চাকরির সুবাদে তারা পাউবো’র কোয়ার্টারে দীর্ঘদিন ছিল। তখন থেকে জয়ন্তী চক্রবর্তীর কোয়ার্টারে বসবাস করেন। এ সুবাদে জয়ন্তী তার পরিচিত ছিল। তা ছাড়া টিভি’র ডিশ লাইন পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায়ই জয়ন্তীর বাসায় যাতায়াত ছিল তার।
জামাল হোসেন পুলিশকে আরো জানায়, ঘটনার দিন আনুমানিক দুপুর ১২টায় আনিছুর রহমান ও জালাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাউবো’র পরিত্যক্ত স্কুল ঘরে এসে ইয়াবা সেবন করে। পরে দুজনই জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাসায় যায়। নিচতলার সানশেডে উঠে জামাল ডিশের লাইন নাড়াচাড়া করলে জয়ন্তীর টিভি দেখায় সমস্যা হয়। তখন তিনি বারান্দায় এসে আসামিদের টিভি দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান।
সে জানায়, এরপর কৌশলে তারা বাসায় ঢুকে জন্য লাইন ঠিক করার কথা বলে নিচে গেটের চাবি নেয়। পরবর্তীতে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল বাসায় প্রবেশ করে। এরপর জয়ন্তীর মুখ চেপে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে তারা ঘরে থাকা একটি ধারালো ছুরি দিয়ে জামাল শিক্ষিকাকে গলায় জবাই করে হত্যা করে। পরে আনিছ বাথরুম থেকে মগে করে পানি এনে রক্তমাখা ছুরিটি লাশের ওপর ধুয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয় বলে জানায় জামাল।
চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন জয়ন্তী চক্রবর্তী। জুলাই মাসের ২১ তারিখ নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন তিনি। তার স্বামী আলোক গোস্বামী চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন