বর্তমানে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) পরিবর্তে নাগরিকদের হাতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত উন্নতমানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তথ্যে ত্রুটি বা ঘাটতি থাকার কারণে ছাপা হয়নি অনেকের স্মার্টকার্ড। এজন্য বিতরণের নির্ধারিত সময়ে অনেকেই তাদের স্মার্টকার্ড নিতে পারেননি। অবশেষে তাদের স্মার্টকার্ড ছাপানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড বিতরণের শুরু থেকেই এজন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অনেক নাগরিককে। এসব নাগরিকদের এনআইডি নাম্বার দিয়ে কার্ড খুঁজতে গেলে সেখানে ‘নট ফাউন্ড’ লেখা আসে। মানে তাদের তথ্যে হয় কোনো ভুল আছে, না হয় তথ্যের ঘাটতি আছে। ২০১৬ সাল থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি কমিশন। স্মার্টকার্ডও পায়নি ওইসব নাগরিকেরা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির বৈঠকে নট ফাউন্ড স্মার্টকার্ড দ্রুত ছাপানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এ কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
বৈঠকে জানানো হয়, স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৯০ মিলিয়ন। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ শুরু হয়। আর ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর থেকে তা বিতরণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত স্মার্টকার্ড ছাপানো হয়েছে ৪৬ মিলিয়ন। বিতরণ করা হয়েছে ৩৩.২১ মিলিয়ন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক কার্ড অবিতরণ রয়ে গেছে।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, নট ফাউন্ড সমস্যার কারণে যে স্মার্ডকার্ডগুলো মুদ্রিত হয়নি, সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মুদ্রণের সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, দ্রুতই নট ফাউন্ড সমস্যার সমাধান করা হবে। যারা স্মার্টকার্ড পাচ্ছে না তাদের তথ্য অসম্পূর্ণ। অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে কার্ড প্রিন্ট হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা এখন পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি। যেসব এলাকায় স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে, তাদেরকে ৭৫ দিন আগে জানানো হচ্ছে। প্রথমে আমরা ওই এলাকার স্মার্টকার্ড প্রিন্ট দিচ্ছি। তারপর দেখছি কোন কার্ডগুলো প্রিন্ট হয়নি। যেগুলো প্রিন্ট হবে না। সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিসে তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং যাদের কার্ডে যে অংশে সমস্যা আছে, পুনরায় ফরম পূরণ করিয়ে তা আবার প্রিন্ট দিয়ে ওই এলাকায় পাঠানো হবে।
জানা যায়, স্মার্টকার্ড তৈরির প্রকল্প আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় শুরু হয়। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার কথা ছিল। স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস নামে এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। পরবর্তীতে এর মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়ালেও কথা মতো কাজ শেষ করতে পারেনি ওই কোম্পানি। পরে তাদের সঙ্গে আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো বা নতুন করে আর কোনো চুক্তি করেনি কেএম নূরুল হুদা কমিশন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ৪২ লাখের মতো ভোটার রয়েছে। প্রথম থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা হারানো সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে কমিশন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন