কুমিল্লায় এ বছর পশুর চামড়া নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। ঈদের দিন ও পরের দিন ক্রেতা না থাকায় কাঙ্খিত মূল্য পাননি বিক্রেতারা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। এক’শ থেকে দুই’শ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে চামড়া। ক্ষোভে কেউ চামড়া মাটিতে পুঁতলেন, কেউ গোমতী নদীতে চামড়া ফেলে দেন।
গত ত্রিশ বছরে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান ট্যানারি মালিকরা সময়মতো টাকা না দেয়ায় তারা চামড়া কিনতে পারেননি। কুমিল্লা জেলায় এ বছর প্রায় চার লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের থেকে কিনে নেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চামড়া মুল্য এতোটাই কম যে বড় বড় চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র এক’শ থেকে দুই’শ টাকায়। বিক্রেতারা চামড়ার মূল্য নিয়ে ক্ষোভ জানান।
মঙ্গলবার চামড়ার দাম ২-৩ শত টাকার বেশী না পাওয়ায় বুড়িচংয়ের গোবিন্দপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ, শাহ আলম, ময়নাল হোসেনসহ আরও ২-৩ জন মিলে তাদের ক্রয় করা দুই শতাধিক চামড়া গোমতী নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করে।
ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে দুই শতাধিক চামড়া এলাকা থেকে সংগ্রহ করি। কোরবানির পশুর চামড়ার হল গরীব অসহায় আর এতিমদেরও হক। একটি সিন্ডিকেটের কাছে সবাই জিম্মি হয়ে গিয়ে ধরা খেলাম। তাই যে টাকা দিয়ে এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছি তার অর্ধেক দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ২৪৫টি গরুর চামড়া গোবিন্দপুরে গোমতী নদীতে ফেলে দেই।
চৌদ্দগ্রামের মোশারফ হোসেন গরুর চামড়া একশ’ টাকা দাম বলায় তা মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
কুমিল্লা ঋষিপট্টিতে গিয়ে দেখা যায় চিন্তামগ্ন হয়ে বসে আছেন চামড়া ব্যবসায়ী রতন ঋষি, বীরেন্দ্র ঋষিসহ আরো বেশ কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী। তারা জানান, গত দুই বছরের পাওনা টাকা দেননি ট্যানারি মালিকরা। তাই তারা এ বছর চামড়া কেনার পুঁজি পাননি। ভরা মৌসুমেও ব্যস্ততাহীন সময় কেটেছে তাদের। পুরো জেলার অন্তত চল্লিশ শতাংশ চামড়া কিনে থাকেন ঋষিপট্টির ঋষিরা। রতন ঋষি জানান, আমরা গরিব মানুষ ট্যানারির মালিকদের সাথে এ বিষয়ে কোন রকম দ্বন্দ্বে যেতে চাই না। এখন আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদর্শ সদর উপজেলার কালখড়পাড় হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মো: হানিফসহ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া নিয়ে বিপাকে আছেন। কারণ প্রতি বছর তারা চামড়াগুলো সংগ্রহ করে যে দামে বিক্রি করেন তার অর্ধেক চামড়ার মালিককে দেন বাকি অর্ধেক এতিম ছাত্রদের জন্য দানস্বরুপ রেখে দেন। এ বছর চামড়া ব্যবসায়ী না আসায় খুব চিন্তিত তারা। এ চিত্রটি পুরো জেলায়।
বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর জানান, এখন লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে বলবো। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারপর যে সিদ্ধান্ত আসে আমরা সেভাবেই কাজ করবো।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন