অনুমোদনহীন দুধ ও দই বিক্রি করা সব প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা জমা দিতে না পারায় মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিএসটিআই এই তালিকা জমা দিতে হবে।
রবিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে। দুধে কীটনাশক ও সীসা পাওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানিতে এই ভর্ৎসনা করা হয়।
হাইকোর্টে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে দুধ ও দই বিক্রিকারী ৩১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিলেও বিএসটিআই জমা দিয়েছে তাদের লাইসেন্স দেয়া ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা।
বিএসটিআইকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ‘প্রফেসর শাহনিলা ফেরদৌসী ৩১টি পাস্তুরিত দুধের কোম্পানির নাম পেয়েছেন, আপনারা পাচ্ছেন না কেন? যাদের লাইসেন্স নেই, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? আগামী ১৫ জুলাই লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির নামসহ আপনাদের পরীক্ষার প্রতিবেদন এবং যেসব কোম্পানির দায়িত্ব আপনাদের নয় বলে দাবি করছেন, সে বিষয়ে হলফ করে জানান।’
প্রফেসর শাহনীলা ফেরদৌসী ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে এই গবেষণা কাজ করেন। ২০১৫ সাল থেকে তারা এ গবেষণা কাজ করে আসছেন। তাদের গবেষণা কাজ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফাও আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করে।
আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন সরকার এমআর হাসান (মামুন), দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
এর আগে বাজারের সব ধরনের তরল দুধ ও দই পরীক্ষা করে একমাসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১৫ মে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারই আলোকে রবিবার আদালতে শুনানি হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আজ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও সেটি দাখিল করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আদালত ফের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’
অন্যদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘দুধ-দইয়ে অণুজীব, কীটনাশক ও সীসার উপস্থিতির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ (রোববার) দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ও সংস্থাটির দায়িত্বে থাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এস এস এম জুবেরি প্রতিবেদন জমা দিতে সময় চান।’
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান (মামুন) ও সংস্থাটির উপপরিচালক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম আদালতকে জানান, তাদের আংশিক প্রতিবেদন প্রস্তুত। তারা মোট ১৮টি পাস্তুরিত দুধের জন্য লাইসেন্স দিয়েছেন, অন্যগুলোর দায়িত্ব তাদের নয়। সেগুলোর দায়িত্ব কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তাদের লাইসেন্স দেওয়া ১৮টি কোম্পানির নাম আদালতে জমা দিয়েছেন।
তবে আদালত বিএসটিআইয়ের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘গাভির দুধ ও দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, সিসা!’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাভির দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এই পণ্যেও মিলেছে সিসা।’
ঢাকাটাইমস/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন