গরিব পরিবারের সন্তান নূর মোহাম্মদ। বাবা ছিলেন রিকশাচালক। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়ায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। এক সময় এলাকার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন নূর। নেশা থেকেই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জন করেন খিলগাঁওয়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর ‘খেতাব’।
এলাকার ছিনতাই ও ফুটপাতে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটেরও হোতা তিনি। শূন্য থেকে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সিপাহীবাগ আইসক্রিম গলিতে দরিদ্র বাবাকে ধরিয়ে দিয়েছেন রিকশার গ্যারেজের ব্যবসা।
তবে টাকা আর ক্ষমতা হাতে এলেও সন্ত্রাসের অপবাদ নূরের পিছু ছাড়েনি। তাই অপরাধীর তকমা কাটাতে টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নেন রাজনৈতিক পদপদবি।
এখন তিনি ঢাকা দক্ষিণের খিলগাঁও থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। অবশ্য কথায় আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। নূর মোহাম্মদের ক্ষেত্রেও হয়েছে তা-ই।
গত বৃহস্পতিবার রাতে খিলগাঁওয়ের ছাহেরুনবাগ থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নবীনবাগ এলাকা থেকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক মো. মাসুদ মিয়াকে।
সেই সঙ্গে জব্দ করা হয় শ্রমিক লীগ নেতার নিশান পেট্রল জিপ গাড়িটিও (ঢাকা মেট্রো ঘ-০২-২১৪৮)। বিলাশবহুল এ গাড়িতে করেই চলত নূরের মাদক ব্যবসা।
জানা গেছে, খিলগাঁওয়ের আইসক্রিম গলি এলাকায়ই ‘সৃষ্টি’ নামে একটি মাদক নিরাময়কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন নূর মোহাম্মদ। মূলত এ প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই নিজের মাদক সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
তবে মাদক ব্যবসা, জুয়া ও নারীঘটিত অনৈতিক ব্যবসার অভিযোগে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তখন পালিয়ে বাঁচলেও মাদকের কারবার ছাড়তে পারেননি নূর মোহাম্মদ।
রাজনৈতিক পদকে ঢাল বানিয়ে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়া বিশাল এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেদার চালিয়ে আসছিলেন এ কারবার।
সিন্ডিকেটের কর্মীরা মোটরসাইকেল ও ভ্রাম্যমাণভাবে বিকিকিনি করলেও শ্রমিক লীগের এ নেতা ইয়াবা বেচতেন নামি-দামি গাড়িতে করে। অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি।
অভিযানে অংশ নেওয়া খিলগাঁও থানার এসআই তারিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ও তার গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে জড়িত যে-ই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ এদিকে মাদকের এ মামলা ছাড়াও নূর মোহম্মদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়ার মিয়া হত্যাকা-সহ ছিনতাই, মাদকের আরও আটটি মামলা রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন থানায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন