রাজধানীর বনানী ১১ নং রোডে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঠিক উল্টো দিকের পুলিশ বক্সের সামনে এলোমেলোভাবে গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স দেখার প্রতিবাদ করায় একটি জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিকের গাড়িতে মামলা দিয়েছে সেখানে দায়িত্বরত দুই পুলিশ সার্জেন্ট।
বুধবার (২২ মে) বনানীর ওই পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবাদকারী সাংবাদিক সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেন- হায়রে জনগণের বন্ধু পবিত্র ‘পুলিশ’। ড্রাইভিং লাইসেন্স ওকে, গাড়ির লাইসেন্স ওকে, ইন্সুরেন্স ওকে, গাড়িতে দুটো হেলমেট। কিন্তু অপরাধ হচ্ছে, তারা মেইন রাস্তার মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে লাইসেন্স দেখছে, সেটা বলেছি কেন?’
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও লিখেছেন, অফিস টাইম (সময় ৯টা ৫৫ মিনিট), বনানী ১১ নং রাস্তার মাঝখানে দুই পুলিশ কনেস্টবল দুটো প্রাইভেটকার থামিয়ে লাইসেন্স চেক করছে। এদিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, লেগে গেছে জ্যাম। শুধু বলছি, ‘ভিজে যাচ্ছি, আপনি যা করবেন রাস্তার পাশে নিয়ে করেন। আমরা ভিজে যাচ্ছি।’ কনস্টেবলের মাথায় লেগেছে, আমি তাকে এটা বলার কে? ট্রাফিক বক্সে বসে থাকা লেডি সার্জেন্টকে ডেকে বললেন, স্যার উনি আমাকে নিয়ম শেখাচ্ছেন। লেডি সার্জেন্ট এসে, ‘আপনার লাইসেন্স দেন’। দিলাম। তারপর কোন কথা নেই, ট্রাফিক বক্সে গিয়ে মামলা ঠুকলো ৯৫০ টাকা। অপরাধ, আমার পেছনের জন হেলমেট পরে নাই। (কিন্তু তখনি কেবল পেছনের জন হেলমেট খুলে রেখেছেন, সেটাই নাকি হেলমেট পরি নাই) আপনারা যারা আমাকে চেনেন, আমি যে ডাবল হেলমেট ব্যবহার করি তা আপনারা জানেন হয়তো।
ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক তার ফেসবুকে আরও লিখেছেন, পাশে থাকা অপর সার্জেট বলছেন, নিয়ম শেখান, পাবলিক (রাবি) ভার্সিটি পড়ে আসছি। আমি বললাম, আমিও পড়েছি, পুলিশের সাথে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু কথা না শুনে, না বুঝে মামলাটা দিতে পারেন না। তিনি বললেন, ‘আগে বললে হতো। আগে পরিচয় দেবেন না’। পড়ে আমার পেছনে থাকা যাত্রী বললেন, আমিও রাবিতে পড়ছি, বেসরকারি টিভিতে জব করি। কিন্তু পরিচয় জানলে ছেড়ে দেবেন, এটা আমাদের প্রয়োজন ছিল না। আমরা সাধারণভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছি।’
এসময় কোনও এক পুলিশ অফিসারের ইউনিফর্মে নাম প্লেট ছিল না। বললাম, ভাই আপনার নামটা জানতে পারি? বললো- আপনি পরিচয় জানতে চান, আপনার পরিচয় দেন। সংবাদের আইডি কার্ড দিলাম, উনি ছবি তুলছেন আইডি কার্ডের আর বলছেন দাঁড়ান আপনাকে আমি এরেস্ট করতে পারি, এই ডাকেনতো! ডেলটা, ডেলটা!
বললাম, আপনার নামটাও জানার অধিকার কি আমি রাখি না? সেখানে আপনি আমার আইডি কার্ডে ছবি তুলছেন? পরে বলে কথা না বাড়িয়ে চলে যান, আউট! আউট!
সত্যি অবাক হওয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না।
পরে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমাকে ১৩৭ ও ১৫৫ ধারায় দুটি মামলা দিয়েছেন। আমার অপরাধ যা নয়, তার জন্য আমার ওপর মামলা চাপিয়ে দিয়েছেন।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বীমা ব্যতীত গাড়ি চালানো জরিমানা ৭৫০ টাকা (ধারা-১৫৫) ও যে সকল অপরাধের জন্য মোটরযান আইনে সুনির্দিষ্ট কোনও শাস্তির ব্যবস্থা নেই সেগুলোর জরিমানা ২০০ টাকা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে জরিমানা ৪০০ টাকা (ধারা-১৩৭)।
জানা যায়, গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করতে হলে কমপক্ষে সার্জেন্ট বা উপপরিদর্শক (সাব-ইন্সপেক্টর) এর নিচে নয় এমন পুলিশ কর্মকর্তা, মোটরযান পরিদর্শকসহ বিআরটিএ এর কর্মকর্তা এবং মোবাইল কোর্টের কর্মকর্তা হতে হবে। তবে ওই সাংবাদিকের ভাষ্যমতে ঘটনাস্থলে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল!
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর ট্রাফিক বিভাগের এসি (সহকারী পুলিশ কমিশনার)’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘এমনটা হবার কথা নয়, কিন্তু কেন হয়েছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখবো।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন