অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। স্কুল জীবন থেকে রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির’ দায়িত্ব পালন করেছেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যানও। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন এই রাজনীতিক। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনীতির নানা তথ্য-উপাত্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ: টানা তিন বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও কোন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: দেশের জনগণ পরপর তিনবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সুনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ২১ সাল পর্যন্ত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা।
ব্রেকিংনিউজ: জেলা-উপজেলায় কাউন্সিল ঘিরে সর্বত্র নব্য আওয়ামী লীগারদের বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের কোনো ধরণের নির্দেশনা রয়েছে কিনা?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: জেলা উপজেলা সম্মেলনে নব্য আওয়ামী লীগারদের ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। যারা বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার দায়িত্বে রয়েছে এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে, এটি খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। আমাদের আদর্শ বিরোধী কেউ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী লোক দলের নেতৃত্বে যাতে আসতে না পারে সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন দলের প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রেকিংনিউজ: মূল দল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন হলেও দলের সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের দীর্ঘ দিন ধরে কাউন্সিল না হওয়ার বিষটি কীভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল বিলম্বিত হওয়ার সমীচীন নয়। বিলম্বিত হলে সংগঠন শক্তিশালী হয় না। এটা সংগঠনকে স্থবির করে তুলে। আমরা নেত্রীকে বলেছি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মূল দল, যেখানে মূল দলের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন হচ্ছে। আমি মনে করি সহযোগী সংগঠনের অনতিবিলম্বে সম্মেলন হওয়া উচিত।
ব্রেকিংনিউজ: বর্তমান ছাত্র রাজনীতির সাথে আপনাদের সময়ের ছাত্র রাজনীতির পার্থক্যটা জানতে চাই?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: বর্তমান ছাত্র রাজনীতির সাথে অতীতের ছাত্র রাজনীতির সাথে অনেক অনেক তফাৎ রয়েছে। আমরা ছাত্র রাজনীতি করতে যেয়ে কোন দিন পদ চাইনি। দল-সংগঠন আমাকে পথ দিয়েছে যোগ্যতা অনুসারে। এখন ছাত্র সমাজ আগে পদ চায়।
আমাদের ছাত্র রাজনীতি করার সময় কেউ অভিযোগ করতে পারেনি। ছাত্র রাজনীতির মডেল ছিলাম আমরা। সেই জায়গার তুলনা করা হলে, আমরা ছাত্রনেতা থাকাকালে আল্লাহর রহমতে জনসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার পর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’তে জয়েন করেছি।
এখন ছাত্রনেতারা ব্যবসায়ী হয়ে যায়। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর একটা দিনও বসে থাকিনি। আমি ঠিকাদারি করতে যাইনি। আমি ব্যবসা করতে যাইনি। ছাত্র রাজনীতির সময় আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিনিনি৷ একজন ছাত্রনেতা ব্যবসা করবে এটা হতে পারে না। আমি ‘দৈনিক বাংলার বাণী’তে দীর্ঘ ১৪ বছর চাকরি করেছি। যখন চাকরি করেছি তখন সংবাদপত্র শিল্পের দুর্দিন চলছিল। আমরা চেষ্টা করেছি ছাত্র সমাজের কাছে আমাদের সততা প্রমাণ করতে। সততা আমার ব্যক্তিগত জীবনে, রাজনীতিতে প্রমাণ করতে পেরেছি বলেই তো এত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে ছাত্র সমাজ আমাদের ভোট দিয়েছিলেন। নেত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছে পবিত্রতার সাথে ইবাদত মনে করে পালন করেছি।
ব্রেকিংনিউজ: ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার পর দুই পক্ষের হট্টগোল, পাল্টা-পাল্টি সংবাদ সম্মেলন, তারপর সমঝোতা, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সামগ্রিক ঘটনা দুঃখজনক। আমরা পদের রাজনীতির সাথে অভ্যস্ত নই। ছাত্রলীগ হচ্ছে বিশাল সংগঠন। সবাইকে পদ দিয়ে খুশি করা যায় না। আমিও তো মনোনয়ন পাইনি, তার জন্য তো আমরা বিক্ষোভ করিনি। নেত্রী দিলে আছি, আর না দিলে নাই। রাজনীতিতে পাইলে আছি না পাইলে নাই- এরা দীর্ঘদিন রাজনীতি করবে না, এরা পদ-পদবী চায়। এরা পদ-পদবীকে বিক্রি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। মধুর ক্যান্টিনের ঘটনা নিয়ে আমরা তিন দিন যাবত আলাপ-আলোচনা করে সুন্দর সমাধান করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে সে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। যোগ্যদের শূন্য পদের বসানো হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেননি। নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল থেকেছি। তার পরদিনই নেত্রীর প্রার্থীকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছি। সেটা ছিল সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য একটি মেসেজ, যাতে কেউ কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ না করে। তারপর জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছি। ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছি।
ব্রেকিংনিউজ: আপনার রাজনীতিতে অনুপ্রেরণা কে ছিলেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: আমার রাজনৈতিক জীবনে বাবা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমার বড় ভাই হুমায়ুন কবিরও ছাত্রলীগ করতেন। ৬০ এর দশকে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন করায় তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। আমার পরিবার ছিল রাজনৈতিক পরিবার। আমার পিতা-মাতা বড় ভাই-বোন সবাই আমাকে রাজনীতির প্রেরণা যুগিয়েছেন।
ব্রেকিংনিউজ: রাজনীতির শুরুর দিকটা যদি বলেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান আমলে স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির শুরু করি। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় আমি ছাত্রলীগে যোগদান করি। আমারা পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। হচ্ছে পাকিস্তানের বেনিয়াদের দ্বারা নিগৃহীত ছাত্র সমাজের পক্ষে সোচ্চার হয়েছি। তখন আমি বরিশালের এ.কে ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। স্কুল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হই। আমি কখনো রাজনীতি থেকে বিশ্রাম নেইনি। ১৯৬৮ সাল থেকে আমি নিরন্তর আওয়ামী লীগ করেছি, কখনো ছাত্রলীগ, কখনো যুবলীগ এখন আওয়ামী লীগে দায়িত্ব পালন করছি। যতদিন বেঁচে আছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাব।
ব্রেকিংনিউজ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাহাঙ্গীর কবির নানক: আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন