নিজ বাসা থেকে পালানোর দুইদিন পর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (২০ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে দুই ছেলে ও প্রীতিলতা হল থেকে এক মেয়েকে উদ্ধার হওয়ার পর মঙ্গলবার (২১ মে) বিষয়টি জানাজানি হয়।
ওই তিনজনের নাম ইরতিজা আল ওয়াসী, সাবিত বিন হাদি ও এক মেয়ে। তারা তিনজনই উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে।
ওই তিন ছেলেমেয়ের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান ওই মেয়ে। পরে তার দুই বন্ধু ওয়াসী ও হাদি মিলে পরামর্শ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। তারা ওই ছাত্রীর কাছে দুই দিনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানায়। ওই ছাত্রী তাদের প্রস্তাবে সম্মত হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। এসময় তাদের মুঠোফোন ও ফেসবুক বন্ধ ছিলো।
পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের তিনজনকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বাড়ি থেকে পালানোর একদিন পর পরিবারের লোকজন জানতে পারেন ওই তিন ছেলেমেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও এক বহিরাগত মিলে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরকে ক্যাম্পাসে আশ্রয় দিয়েছে মর্মে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই তিন ছেলেমেয়ের অভিভাবক।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর, সহ-সম্পাদক রাশেদ আল নাঈম, কর্মী সৈয়দ লায়েব আলীসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর সহযোগিতায় সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দুই ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ১২৭ নম্বর কক্ষ ও মেয়েটিকে প্রীতিলতা হল থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মেয়েটির বাবা এক ফেসবুক পোস্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আশ্রয়’ দেয়া ওই ছাত্রীর নাম রাফিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও প্রীতিলতা হলের আবাসিক ছাত্রী। বহিরাগত ওই ব্যক্তির নাম সাজ গহিন (২৩)। তিনি রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
জানতে চাইলে রাফিয়া বলেন, ‘গহিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় কুষ্টিয়ার লালন শাহের মেলায়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। গত রবিবার (১৯ মে) গহিন আমাকে একটা মেয়েকে হলে রাখার জন্য অনুরোধ করে। আমি না করে দেই। পরে ওই মেয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে। এসময় তার পেটব্যাথা ছিলো। এ অবস্থায় তাকে আমি হলে থাকতে দেই। পরদিন সকালেই সে হল থেকে বেড়িয়ে যায়। তারপর কি হয়েছে আমি জানিনা।’
সাজ গহিন বলেন, ‘বাড়ি পালানো ওই মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। সে আমার এক বান্ধবীর পরিচিত। আমার বান্ধবী ওকে একরাতের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধু রাফিয়ার সঙ্গে কথা বলে তার থাকার ব্যবস্থা করি। কিন্তু ওই মেয়ের সঙ্গে যে আরও দুইজন ছেলে আছে আমি তা জানতাম না। তারা তিনজনই ক্যাম্পাসে চলে আসলে আর কোন উপায় না পেয়ে এক বন্ধুর রুমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘এরকম একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। যারা আশ্রয় দিয়েছে আমরা তাদেরকে ডাকবো। তাদের মধ্যে কোন দোষত্রুটি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন