‘ধান না থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়া খাবো কী, ধানইতো আমাদের প্রধান খাদ্য। তাই লোকসান হইলেও কষ্ট কইরা ধান আবাদ করি।’ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদকারী সেই কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন। প্রতিবাদী কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার তার কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন নয়া দিগন্ত’র কাছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় প্রতিবাদী এই কৃষকের সাথে। তিনি বলেন, ‘পাকা ধানে আগুন দিতে আমার খুব কষ্ট হইছে। কিন্তু কী করব, কষ্ট কইরা ধান আবাদ করি, অথচ সেই ধানের ন্যায্য মূল্য পাই না। তাই মনের দুঃখে আমি এই কাজ করছি। আর ধানের দাম বাড়ানো হলেই আমার এই কষ্ট, আমার এই প্রতিবাদ সার্থক হবে।’
ধানের দাম কম থাকায় এবং শ্রমিকের দাম অনেক বেশি হওয়ায় রাগে, ক্ষোভে-দুঃখে মালেক সিকদার গত ১২ মে তার ৫৬ শতাংশ একটি জমির এক কোণে কেরোসিন তেল ঢেলে পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে আশেপাশের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন। বিষয়টি মিডিয়ার কল্যাণে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে টাঙ্গাইলের তিনটি কলেজের ১৫ জন শিক্ষার্থী সারাদেশের কৃষকদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে মালেক সিকাদারের ক্ষেতের ধান কেটে দেন বিনা পারিশ্রমিকে।
পাকা ধানে অগ্নিসংযোগের পর রীতিমত হিরো বনে যান প্রতিবাদী কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার। তার দেখাদেখি আরো কয়েকটি স্থানে পাকা ধানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য স্থানেও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা যায় কৃষকদের ধান কেটে দিতে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন পালন করে কর্মসূচি।
টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। ফলনও হয়েছে ভাল; কিন্ত এতে চাষীরা খুশি হতে পারেননি। খুশি হওয়ার পরিবর্তে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পাকা ধানে আগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন