বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। বর্তমান বাজারে যেখানে একমণ ধানের দাম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, সেখানে একজন শ্রমিকের মূল্য দিনপ্রতি প্রায় ৬০০ টাকা। এছাড়া এবার খরার কারণে সেচ খরচও বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ ওঠাতেই নাভিশ্বাস উঠছে কৃষকদের।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল মমিন বলেন, ‘এবার দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলাম। ইতোমধ্যে পুরো ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। তবে হাটে ধানের দাম না পেয়ে হতাশ। এবার অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরোর উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, বিঘা প্রতি ধান লাগানো বাবদ প্রায় দুই হাজার টাকা, লাঙল বাবদ ১২শ’ টাকা, ধানের বীজ পাঁচশ’ টাকা, সেচ বাবদ তিন হাজার টাকা, সার-কীটনাশক খরচ বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা, ধার কাটা বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা ও ধান পরিবহন বাবদ প্রায় চারশ’ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ সে তুলনায় ধানের দাম একেবারেই নেই।
একই উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ইসা হক জানান, এবার ১৫ কাঠা জমিতে চিকন ধানের আবাদ করেছি। আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ১শ’ টাকা। কিন্তু খরচের তুলনায় ধানের দাম একদমই কম।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাজারে চিকন ধানের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে একই দামে আবাদ না করে ওই টাকায় আরও বেশি ধান কিনতে পারতাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের জন্য ৩৫ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল । এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৪০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ১ হাজার ৪৯৫ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৫ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
এদিকে, বুধবার (১৫ মে) বিকাল থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার আয়োজন করে সদর উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের নির্দেশে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান কেনা হয়। এতে প্রতি মণের দাম দাঁড়ায় ১৪শ’ টাকা।
কিন্তু বাইরে ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে এই ধান কিনছেন।
আলামপুর গ্রামের ধানচাষি আতিয়ার রহমান বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রায় সব ধান কাটা হয়ে গেছে। কিন্তু দাম কম থাকায় বিক্রি করতে পারছিনা। সরকার যদি এভাবে সরাসরি গিয়ে সব ধান কিনে নিত, তাহলে চাষিরা লাভবান হতো।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চাষিরা ধানের ন্যায্য বাজারদর পাচ্ছেন না। তাই গ্রামে গিয়ে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে, যাতে চাষিরা প্রকৃত দাম পান।’
প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে অন্তত ৪০ জন কৃষকের ধান সরাসরি ক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন