দুর্বৃত্তরা নিশানা ভুল করায় মরতে হয়েছে ভুল ব্যক্তিকে। সম্প্রতি জেল থেকে ছগির হোসেন নামের এক মাদক কারবারি তার নিজের সহযোগী মফিজুর রহমানকে মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ পাঠায় স্থানীয় একটি গ্যাংয়ের কাছে। কিন্তু ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা মফিজের ঘর চিনতে ভুল করে রাজু নামের আরেক জনকে খুন করেছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) ভোরে ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়া এলাকায় বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার রাজু পেশায় ছিলেন রিকশাচালক।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
তিনি জানান, পুলিশের অভিযানে আটক ৮ দুর্বৃত্ত টার্গেট ভুলের কারণে ভুল ব্যক্তিকে হত্যার কথা জানিয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো- সেলিনা আক্তার সেলি (৪৫), শিমুল দাশ (২০), তানভির হোসেন প্রকাশ সিফাত (১৮), মো. সুজন প্রকাশ মধু (১৮), মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ শাহ রাকিব (১৮), মো. নুর নবী (১৮), মেহেদী হাসান রুবেল (১৮) ও ওসমান হায়দার কিরন (১৮)।
সংবাদ সম্মেলনে আমেনা বেগম জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় রিকশাচালক রাজুকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজু।
এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছগির। সে নগরীর ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসার মূল হোতা। গত বছরের ২৭ মে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন জেলে আছে। তার নির্দেশেই কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সম্পৃক্ত আরেকজন হলো সগিরের স্ত্রী।
পুলিশ মফিজের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করেছিল এমন সন্দেহের কারণেই হত্যার নির্দেশ দেন সগির। কিন্তু টার্গেট ভুল হওয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে রিকশাচালক রাজুকে।
হত্যার পটভূমির প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ২ মে ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যায়। সেদিন ছগির তার স্ত্রীকে শিমুল, শুক্কুরসহ চার জনকে জেলে গেটে ডেকে নিয়ে যেতে বলে। তারা গেলে ছগির মফিজকে হত্যার নির্দেশ দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মে খুনের খরচ বাবদ ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি শুক্কুরকে এক হাজার টাকা ও ছগিরের ছেলে ওসমান হায়দার কিরন একটি কিরিচ দেয়। পরের দিন (১৪ মে) সবাই হাড্ডি কোম্পানির মোড়ে রুবেলের টং দোকানের সামনে জড়ো হয়ে খুনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৪ মে ফজরের নামাজের পর মফিজের ভাড়া ঘরে যায় শিমুল, শুক্কুর, রাকিব, সিফাত ও সুজন। এসময় বাইরে থেকে পাহারা দেয় নুরনবী ও রুবেল। হত্যার সময় যাতে আশেপাশের ঘরগুলোর কেউ বাধা দিতে না পারে এজন্য পাশের সব ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় তারা। কিন্তু এসময় তারা মফিজের ঘরে প্রবেশ করার পরিবর্তে ভুল করে ওই ঘরের পার্শ্ববর্তী রাজুর ঘরে প্রবেশ করে। এরপর রাজুকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে আশেপাশের লোকজন রাজুকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আশিকুর রহমান, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন