পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ৬১ দিন (২২ এপ্রিল) অতিবাহিত হয়েছে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাস্থলে ৬৬ জন এবং পরে আহত ও দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আরও চারজন মারা যান। অগ্নিকাণ্ডের দুই মাস পর এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে চুড়িহাট্টার হাজি ওয়াহেদ ম্যানশন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের রাজ মহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টটি খোলা রয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরণের সময় যেভাবে শ্রমিকরা দোকানের বাইরে নানরুটি তৈরি করছিলেন, ঠিক একই পরিবেশ আজও তারা কাজ করছেন। ভেতরেও প্রায় ১৫-২০ জন দুপুরের খাবার খাচ্ছেন।
মামুন নামে রেস্টুরেন্টটির এক কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) হোটেলটি খোলা হয়েছে। এখানে আগের মতোই লোকজন এসে তিন বেলা খাবার খাচ্ছেন। আগে যেসব কর্মচারী কাজ করতো এখনো তারাই কাজ করছে। সবকর্মী আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎফুল্লতার সঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে রাজ মহলের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরলেও ওয়াহেদ ম্যানশনে এখনো সুনসান নীরবতা। ভবনটিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফলে ভবনে কেউ নেই। ভবনের নিচতলার দোকানগুলো থেকে সব মালামাল ও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচে একজন সবজি বিক্রি করছেন।
ভবনের বাইরে নিহত মোহাম্মদ মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজুর ছবি টাঙানো। পেছনের দিকে রয়েছে বিভিন্ন দোকানের ‘স্থান পরিবর্তন’র ব্যানার। পুরান ঢাকার বিখ্যাত মদিনা ডেকোরেটরটি ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে সরিয়ে পাশেই ৬৩/৩ নন্দকুমার দত্ত লেনে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগের মতো অনেকেই ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে এসে পোড়া ভবনটির ছবি তুলছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছেন। একে অন্যের সঙ্গে আগুন নিয়ে কথা বলছেন। কেমিক্যাল আর সিলিন্ডার নিয়ে বিতর্ক করছেন। এর মাঝে চকবাজার থানা পুলিশের একটি গাড়ি কিছুক্ষণ পর পর এসে টহল দিচ্ছেন।
রহমত উল্লাহ্ নামের স্থানীয় এক ষাটোর্ধ্ব বাড়িওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, এই আগুন আমাদের পুরান ঢাকাকে নাড়া দিয়েছে। পুরান ঢাকার মানুষ এভাবে আর কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে না। আমরা আর কখনো কাউকে ক্ষতিকর কেমিক্যালের দোকান কিংবা গোডাউন ভাড়া দেব না। যদি কেউ দেয় আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়কে ধরে নিয়ে যেতে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ওয়াহেদ ম্যানশনের দক্ষিণ পাশের ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ফায়ার সার্ভিস। ভবনের বিখ্যাত দোকান ‘নাফিস কালার ট্রেডিংটি’ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা উপেক্ষা করে ভবনটির একটি দোকানে ঝুঁকি নিয়ে একজন ফল বিক্রি করছেন।
ওয়াহেদ ম্যানশনে নিহতদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও দিনমজুর। তাদের পরিবারের সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিয়েছে পুরান ঢাকাবাসী। চুড়িহাট্টাজুড়ে ব্যানার লাগিয়ে নিহত ও আহতদের পরিবারে সদস্যদের জন্য সাহায্য নেয়া হচ্ছে। রমজান মাস ও ঈদের আগে তাদেরকে এই সাহায্য পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান কমিটির সদস্যরা।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসে ৩৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৬৬ জন ও পরে আহত ও দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরও ৪ জন মারা যান।
পুরান ঢাকার ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) পৃথক পৃধক তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে থাকা কেমিক্যাল গোডাউন থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন