কয়েকজন মিলে একসঙ্গে হাঁটাচলা করলে বা বজ্রপাত হলে কেঁপে ওঠে যে ভবন সেই ভবনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন সুপ্রিম কোর্টের ৯ হাজার আইনজীবী! এই চালচিত্র সুপ্রিম কোর্টের চারতলা অ্যানেক্স ভবনটির। অতি পুরনো হওয়ায় ভবনটি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এই দুরাবস্থার মধ্যেই অনেকটা শঙ্কা নিয়েই এই ভবনে প্রতিনিয়ত কাজ করেন আইনজীবীরা। শুধু তাই, চারতলা এ ভবনে ৯ হাজার আইনজীবীর স্থান সংকুলানও হচ্ছে না। আইনজীবীরা বলছেন, অনেকটা ঠাসাঠাসি করে বসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। এ অবস্থায় পুরনো এ ভবনটি পুনর্নির্মাণসহ একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপরে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে তদানীন্তন ঢাকা হাইকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠার সময় এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৯০ জন। এরপর স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬৫ জনে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে আইনজীবীদের বসার জায়গার স্বল্পতা দেখা দিলে তাদের জন্য চারতলা বিশিষ্ট একটি অ্যানেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে ২০১৮ সালে এসে উচ্চ আদালতে আইনজীবীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজারে। ফলে পুরাতন এই চারতলা ভবনের কক্ষগুলোতে ভাগাভাগি করে আইনজীবীদের বসতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আইনজীবীরা চরম দূরাবস্থার মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভবনটি যে একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তা বলা যাবে না।’ তবে আইনজীবীদের বসার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করে এখনই ভবনটি ভাঙা উচিত হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী জানান, কয়েকজন একসঙ্গে হেঁটে যাওয়া বা ভবনের নিচ থেকে কোনও বড় গাড়ি চলাচল করলে ভবনটি কেঁপে ওঠে। আবার বজ্রপাত হলেও ভবনটির সামনের অংশ কাঁপতে থাকে। শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে রাজধানীতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহতের শিকার হচ্ছেন, সেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে আমাদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নয়তো কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে।’
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আইনজীবীদের জন্যে একঠি বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত চারতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘পুরাতন ভবনটি যে কোনও কারণে ধসে পড়লে সমিতির নেতারা এর দায়-দায়িত্ব বহন করবেন না।’
মন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠানোর ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ভবনটি দীর্ঘদিনের পুরাতন। এ ভবনের সামনের অংশ দিয়ে হেঁটে গেলে তা কাঁপতে থাকে এবং এ ভবনের ফাউন্ডেশনও উন্নতমানের নয়। ১৯৯৭ সালে আমি সমিতির সম্পাদক থাকাকালে একবার সার্ভে করা হয়েছিল। তখনই জানা গেছে, মাটির নিচে ভবনটির গভীরতা কম। এ কারণেই আমরা ওই আবেদন করেছি।’
আইনজীবী সমিতির সাবেক কমিটির ওই আবেদনে পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আইনজীবীদের জন্য ১৫ তলা বিশিষ্ট নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণ ও পুরাতন চারতলা ভবনটি ভেঙে সেখানে আরেকটি ভবন পুনর্নির্মাণ করলে সুপ্রিম কোর্টের সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে গত কমিটির ওই আবেদনটির বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না এবং আবেদনটির কোনও অনুলিপি তাকে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমিতির পুরাতন ভবনের সামনে থেকে কিছুটা কম্পনের (কয়েকজন একসঙ্গে হাঁটলে) সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা— তা বলা ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এ বিষয়ে বলা যাবে। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানার পর আশা করছি, সমিতির আগামী সভায় এ নিয়ে আলোচনা করবো।’
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখবো এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন