নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী মোনালিসা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার একমাত্র আসামি আবু সাঈদ জামিন পেয়েছেন। ৪ এপ্রিল উচ্চ আদালতের জামিন আদেশে জেলা কারাগার থেকে সাইদ মুক্তি পেয়েছে।
এর আগে ঘটনার ৮ মাস পর গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল দুবাই থেকে সাইদকে গ্রেফতার করে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে দিয়ে যায়। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও প্রভাবশালী এ আসামির মুক্তির খবর পেয়ে ভয়ে আত্মগোপন করেছে মোনালিসার বাবা মাসহ পুরো পরিবার। তারা ফতুল্লার বাসায় তালা দিয়ে নরসিংদী জেলায় চলে গেছে।
এছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া সাইদ জামিনে মুক্তির পর প্রকাশ্যে চলাফেরায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরিবারের শঙ্কা ন্যায়বিচার নিয়ে। তবে আসামির জামিন ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সিআইডির পরিদর্শক প্রদীপ কুমার সরকার।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, আবু সাঈদকে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত জামিন প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের এ আদেশ ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছেছে। এ দিনই সাইদ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা। তবে মুক্তি পেয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মজিবুর রহমান জানান, আবু সাইদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি এখন তার এলাকায় আছে। আবু সাঈদ ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ বাংলাবাজার এলাকার ইকবাল হোসাইনের ছেলে। আর মোনালিসা একই এলাকার শাহিন বেপারীর মেয়ে এবং বাংলাবাজার হাজি উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মামলার বাদী ও মোনালিসার পিতা শাহিন বেপারী কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, জামিন পাওয়ার আগে থেকেই সাইদ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে এসে এই হুমকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে ভয়ে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী এসে আত্মগোপন করেছি। আমার ঠিকানা কাউকে দেইনি।
শাহিন বেপারী আরও বলেন, আমার ছোট্ট একটা মেয়েকে আবু সাঈদ হত্যা করেছে। ন্যায়বিচার পেতে দিবে না সাইদ। কিন্তু আমি ন্যায়বিচারের জন্য দূর থেকে আইনি লড়াই করব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা সিআইডির পরিদর্শক প্রদীপ কুমার সরকার জানান, খুব শিগগিরই এই মামলার চার্জশিট দাখিল করবো। আসামি জামিন পেতেই পারে। এতে ন্যায় বিচার ব্যাহত হতে পারে না। তাছাড়া সে পালিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও সঠিক নয়। কারণ তার পাসপোর্ট আমাদের কাছে জব্দ করা আছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বিকালে দেওভোগ বাংলাবাজার এলাকার নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর খুন হয় মোনালিসা। অভিযোগ, মোনালিসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায় সাঈদ।
সাঈদকে দেখতে পান বাড়ির ভাড়াটিয়া রবতন বেগম। আবু সাঈদ বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি মোনালিসাদের ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পান মোনালিসার দেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।
ঘটনার দিন মোনালিসার বাবা শাহিন বেপারী ও মা মরিয়ম বেগম নরসিংদী গিয়েছিলেন। নরসিংদী থাকতেই শাহিন বেপারী জানতে পারেন মেয়ের মৃত্যুর খবর। ঘটনার রাতেই আবু সাঈদ দুবাই পালিয়ে যায়।
আবু সাঈদ আগে থেকেই দুবাইয়ে থাকতেন। ঘটনার তিন মাস আগে দেশে ফিরে এসে মোনালিসাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় বিয়েতে মত দেননি শাহিন বেপারী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন