র্যাবের হাতে প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার প্রতারক চক্রের সদস্যরা, জব্দ করা মোবাইল ফোন, সিপিইউসহ অন্যান্য সামগ্রী
প্রথমে চাকরি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত ও হতাশ যুবকদের টার্গেট করে তারা। এরপর ভুয়া লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা, ভুয়া ট্রেনিং আর ভুয়া মেডিকেল টেস্ট করে তাদের চাকরি দেয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। সোমবার রাতে এমনই এক চক্রের ১৬ জনকে আটক করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হচ্ছেন- নওমুসলিম লিঙ্কন ওরফে মাসুদ ওরফে প্রশান্ত কুমার সাহা (৪৩), মো. হাছান জিয়া (৪৪), মো. সাকির আলী ওরফে শাকিল (৩৬), জান্নাতুল ফেরদাউস ওরফে রাসেল (৩৩), মো. সেলিম সরদার (৪৩), শেখ জাকির হোসেন (৪০), মো. আব্দুল কাদের শরীফ (৩৩), মো. হুমায়ুন কবির (৫০), মো. খলিলুর রহমান (৪২), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৬), মো. রাকিবুল ইসলাম ওরফে সম্রাট (২৫), মো. আবুল হোসেন ওরফে সায়মুন (২৮), মো. কেরামত হোসেন ওরফে সজিব (৩৮), রুবেল বিশ্বাস (৩৩), মো. কামরুজ্জামান (৪০), মো. সাইফুল ইসলাম (২৬)।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানিয়েছে, শিক্ষিত, বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের ফটোকপি, জন্মসনদ, নাগরিকত্বের সনদ ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করে রাজধানীতে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এরপর প্রতারকদের ব্যবস্থাপনা টিম রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অথবা হোটেলে অবস্থান করে চাকরিপ্রত্যাশীদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ ঊর্ধ্বতন ভুয়া কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে এবং যাবতীয় কাগজপত্র লোক দেখানো যাচাই বাছাই করে চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে। চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রদত্ত শর্তাবলিতে সম্মত হলে বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে তাদের সঙ্গে মৌখিক অথবা লিখিত চুক্তি করে।
র্যাব জানায়, এরপর তাদের ভুয়া ভাইবা টিমের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট চাকরির মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে তারা একটি সুকৌশলী ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমন- সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে চাকরিপ্রত্যাশীদের বিশ্বস্ততা অর্জনে সেনানিবাসের আশপাশে সুবিধাজনক স্থানে ডেকে প্রার্থীর নাম-ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ চাকরি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন করে ভুয়া মৌখিক পরীক্ষা নেয়। একইভাবে তারা ভূমি অফিস, রেলওয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে সচিবালয়ের আশপাশে সুবিধাজনক জায়গায় ভুয়া মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের বিশ্বস্ততা অর্জনের মাধ্যমে প্রতারণার জাল ফাঁদে।
মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার পর তাদের ভুয়া মেডিকেল টিম চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সুবিধামত একটি তারিখ নির্ধারণ করে এবং সেনানিবাসের আশপাশে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে এনে সেনানিবাসের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার (চেকআপ) ভুয়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
র্যাব জানিয়েছেম গ্রেফতারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ভুয়া নিয়োগপত্র, চাকরি প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সরকারি/বেসরকারি কর্মকর্তার ব্যবহৃত ভুয়া সিলমোহর, সিল প্যাড, কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন