পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের জন্য চাঁদাবাজিকে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিভিন্ন দলের নেতা ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এসময় জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও পরিবহন নেতা মশিউর রহমান রাঙা পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রেখে রংপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসতে একটি বাসকে ৫০০০ টাকা চাঁদা দেয়ার তথ্য উপস্থাপন করে প্রতিকার চেয়েছেন।
সোমবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত ‘নিরাপদ সড়ক ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠন’ শীর্ষক গোলটেবিল বক্তারা এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খান আলোচনায় চাঁদা ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং এর প্রতিকার হিসেবে সামনে নিয়ে আসলেন চাঁদা আদায়ের ভিন্ন তরিকা। রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা আদায়ের পরিবর্তে অফিসে বসেই চাঁদা আদায়ে সমাধান দেখতে চান তিনি।
বৈঠকে চাঁদা প্রথার সমাধান কল্পে এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক এবং পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের গৃহীত সকল পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা সর্বাক্তক সহযোগি করছি। তাহলে বাধাটা কোথায়? পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাস্তাঘাটে-টার্মিনালে কোথাও কোন চাঁদা থাকবে না। সামনে চাঁদা যাতে অফিসে নেয়া হবে, আমরা সেদিকেও যাচ্ছি!’
এসময় আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত যে কোনো দেশের তুলনায় পরিবহন সেক্টরে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। প্রয়াত মেয়র জনাব আনিসুল হকের নেতৃত্বে ঢাকার পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা যে কাজটা শুরু করেছিলাম, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এর নির্দেশনায় সেটা আমরা আবার শুরু করেছি। আমরা হয়তো আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দেখতে পাব।’
এসময় সড়কে চাঁদাবাজির জন্য উপস্থিত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যরিস্টার নাজমুল হুদাকে দায়ী করে বক্তব্য রাখেন দুই পরিবহন নেতা এনায়েতুল্লাহ ও মশিউর রহমান রাঙা। তাদের অভিযোগ পরিবহণ সেক্টরে নাজমুল হুদার করে যাওয়া পরিবহন সেক্টরের কোম্পানি ব্যবস্থার জন্যই চাঁদাবাজির সৃষ্টি হয়েছে।
অপর দিকে নাজমুল হুদা তার সময়ে করা কোম্পানির মাধ্যমে রুট পারমিট ব্যবস্থা কার্যকর ছিলো বলে দাবি করে বলেন, ‘আমি যখন এ ব্যবস্থা চালু করেছিলাম সর্বমহলে এটা প্রসংশিত হয়েছিল। এতে সড়কের শৃঙ্খলাও ফিরেছিলো। সময় অনেক গড়িয়েছে, অবস্থার পরিবর্তনও হয়েছে। এখন যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা সরকারের সুনজরে আসার জন্য বলছেন।’
মাদকের বিরুদ্ধে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে দাবি করে এ সময় এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ডিএমপির সঙ্গে বসে কথা বলেছি। তাদের বলেছি আপনারা রাস্তায় চালকদের ডোপ টেস্ট করুন। কিন্তু ডিএমপির শুধুমাত্র অ্যালকোহল টেস্ট করার যন্ত্রপাতি রয়েছে। ডোপ টেস্ট করার যন্ত্রপাতি নেই। আমরা মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে প্রস্তাব দিয়েছি, রাস্তায় যখন গাড়ি চলছে তখনই ওই শ্রমিকের ডোপ টেস্ট করা হোক। কারও পজেটিভ প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে জেল দিন।’ এসময় দুর্ঘনাটর সঙ্গে একটি বাসের জন্য পুরো বাস কোম্পানীর সব বাস বন্ধ করে দেয়ার বিরোধীতা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ,সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, জাতীয় পার্টি (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন