জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সভাপতি শায়েখে আব্দুল মুমিন শায়েখে ইমামবাড়ি ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানীদের অন্যায় ক্ষমতা লিপ্সা, অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি অর্জন করেছি। কিন্তু মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা পায়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি না পেয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের যাঁতাকলে বিপর্যস্ত এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। গুটিকয় ক্ষমতা লিপ্সু ও লুটেরার হাতে আজ দেশের সর্বত্র লুটপাট, হুমকি-ধমকি ও অধিকার হরণের যেন মহোৎসব চলছে। ক্ষমতা লিপ্সার রাজনৈতিক যাঁতাকলে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও ইনসাফ আজ নির্বাসনে গেছে। গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার সংবিধান স্বীকৃত হলেও মানুষের এসব অধিকার আজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও নিজের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা নিয়ে আজ সকলে শংকিত। মানুষ যে ভাল নেই, এটা বলার অধিকারও যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে। তাই স্বাধীনতার স্বাদকে পুরোপুরি অর্থবহ করতে হলে দেশপ্রেমিক জনতাকে স্বাধীনতার চেতনা তথা ন্যায়, ইনসাফ ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হতে হবে। জমিয়ত শীর্ষ নেতৃদ্বয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদ ও বীর যোদ্ধার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শহীদগণের রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে জমিয়ত সভাপতি ও মহাসচিব এসব কথা বলেন।
জমিয়ত সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, ইংরেজদের ১৯০ বছরের গোলামীর জিঞ্জীর ভেঙ্গে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে মুসলমানেরা এই ভূখন্ডে সর্বপ্রথম স্বাধীনতা এনেছিল ১৯৪৮ সালে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এ ৯ মাসের লড়াই শেষে কাঙ্খিত চূড়ান্ত স্বাধীনতা এসেছে। জমিয়ত নেতৃদ্বয় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আজ স্বাধীনতার বর্ণনা থেকে পরিকল্পিতভাবে সেই বীরত্বপূর্ণ ১৯০ বছরের ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে, যেখানে উলামায়ে কেরামের দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও রক্তঝরানোর বীরত্ব গাঁথা রয়েছে। জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পূণঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য ৯ মাসের লড়াইয়ে আত্মত্যাগের পাশাপাশি সেই চেপে রাখা ১৯০ বছরের ইতিহাসকেও তরুণ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাবোধকে সমুন্নত রেখে মানুষকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ রাখতে হলে স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের পাঠ দিতে হবে।
জমিয়তে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ, ইনসাফ, ন্যায় বিচার ও সাম্য মহান স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হলেও ক্ষমতার লোভ, প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আত্মনির্ভরশীলতা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা হলেও আমরা কাঙ্খিত সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। অপরদিকে ক্ষমতা ও ভোগের লিপ্সার রাজনীতির কাছে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। কিন্তু অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অধীকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেওয়া হচ্ছে না, অধিকারের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মানুষ যে সুখে নেই, ভাল নেই, নিরাপত্তাবোধ করছে না- এটাও বলতেও ভয় পাচ্ছে। কতটা অধিকারহারা হলে এমন অসহায়ত্ববোধ জাগে, বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অধিকার, ইনসাফ, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে হবে।
বিবৃতিতে জমিয়ত নেতৃদ্বয় আরো বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, আজ পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার চেতনা ও ইসলামকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ ইসলামই জনগণকে প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও চেতনাধারীরা স্বাধীনতার লাইসেন্স হিসেবে খুন, ধর্ষণ, অধিকার হরণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতাকে ধুলিস্যাৎ করছে। জমিয়ত নেতৃদ্বয় জনগণকে প্রকৃত মুক্তির স্বাদ গ্রহণের নিমিত্তে ঈমানী চেতনাবোধকে মজবুত করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কাজে শরীক হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন