তনুর মা আনোয়ারা হোসেন ও বাবা ইয়ার হোসেনের সঙ্গে তারুণ্যের বাংলাদেশ সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: দেশ রূপান্তর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান কুমিল্লায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
মেয়ে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা ও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন শেষ ভরসা বলে জানিয়েছেন তনুর মা।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলেপে এ আক্ষেপের কথা জানান তিনি। এ সময় তনুর বাবা ইয়ার হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
তারা জানান, তনু হত্যার বিচার পেতে এখন আর কাউকে বিশ্বাস করেন না তারা। আস্থাও নেই কারো প্রতি। একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের হেনস্তায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তারা।
কন্যা শোকে গত তিন বছরে শারীরিক-মানসিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ বলে জানান তারা। ভাবলেশহীন দিশেহারা বাবা-মায়ের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে অসহায়ত্বের ছাপ।
সংবাদপত্রের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাগো প্রধানমন্ত্রীর লগে দেখা করাই দেন। আমার তনু হত্যার বিচার প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ করতে পারব না’।
মেয়ে সোহাগী জাহান তনু এভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে এখনো মেনে নিতে পারছেন না তারা।
মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা মির্জাপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে মেয়ে হত্যার বিচারের আশায় দিন পার করছেন আনোয়ারা বেগম ও ইয়ার হোসেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তনুর সহপাঠী 'তারুণ্যের বাংলাদেশ' সংগঠনের সভাপতি মো. নাজমুল হক স্বজল। তনু হত্যার পর এ সংগঠনটির ব্যানারে জোরালো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ গড়ে ওঠে।
স্বজল জানান, তনুকে হারানোর শোক নানামুখী চাপে তার বাবা-মা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শেষ ভরসা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান তনুর বাবা-মা।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে নিখোঁজ হন তনু। পরে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন তনুর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি।
শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।
পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কি না- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না।
সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন