কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এ সংঘর্ষ। এতে প্রায় ১০ শিক্ষক আহত হন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষকদের একটি পক্ষ ও তাদের লোকজন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই কর্মসূচি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন নিয়ে প্রদীপ কুমার সরকার ও কাজি আছমার পক্ষ নিয়ে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। শনিবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষকদের স্টাফ কাউন্সিলের সভায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেয়া নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিদ্যালয়ের চলমান সঙ্কট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে দুপক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এদিকে বিকাল ৩টায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকদের ওই দুটি পক্ষ। এতে মো. মোখলেছুর রহমান, রফিকুল ইসলাম তানিম, আকরাম হোসেন খান, রাজীব মাহমুদ, সলিমুল্লাহ, গীতা রানী ঘোষ, মাওলানা সিহাব উদ্দিনসহ কমপক্ষে ১০ শিক্ষক আহত হন।
এদের মধ্যে গুরুতর আহত মোখলেছুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে এসব হামলাপাল্টা-হামলার জন্য উভয়পক্ষ তাদের প্রতিপক্ষকে দায়ী করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষকদের একটি পক্ষ প্রদীপ কুমার সরকারকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মানে। আরেকটি পক্ষ কাজী আছমাকে প্রধান শিক্ষক গণ্য করে। এসব নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিও দুই ভাগে বিভক্ত।
এই বিরোধের কারণে গত ৯ মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এর জের ধরেই শনিবার দুপক্ষ ও তাদের সমর্থকরা বিদ্যালয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
পরে তা বিদ্যালয়ের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের সমর্থক লোকজনও এতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষকদের এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, সকালে শিক্ষকদের একটি অংশ আমার স্ত্রী এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতা রাণী সরকারসহ আরও তিনজন শিক্ষককে মারধর করে। স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কাজী আছমার সমর্থক শিক্ষকরা তাদের মারধর করে আহত করে। তবে বিকালে আরেক শিক্ষক মুখলেছকে কে বা কারা মারধর করেছে- তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবিদার কাজী আছমা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব শিক্ষকদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু সভা শেষ হতে না হতেই প্রদীপ কুমার সরকারের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়।
হোসেনপুর থানার ওসি আবুল হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুপক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষকদের দলাদলির কারণে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে বিরোধ থাকলেও শিক্ষকদের এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন