বডিগার্ড রাখার যত নিয়মব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী নিয়ে চলেন অনেকেই। কেউ দেহরক্ষী পান সরকারি প্রটোকলে, কাউকে নিতে হয় আবেদন করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ও অন্য পদস্থ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা স্ব স্ব বাহিনীর প্রটোকল অনুযায়ী নির্ধারণ করা থাকে। স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিসহ সাংবিধানিক পদবিধারী অন্য কর্মকর্তা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের লোকজন দেহরক্ষী পেয়ে থাকেন প্রটোকলে। এছাড়াও ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সংসদ সদস্য, সম্পাদক, শিল্পীসহ আরও অনেকেই সরকারের নিয়ম অনুসরণ করে ব্যক্তিগতভাবে দেহরক্ষী রাখেন। সরকারও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করে থাকে। তবে চাইলেই যে কেউ দেহরক্ষী রাখতে পারেন না। এজন্য বেশ কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয়। আর আইনগুলোও বেশ কঠোর।
ইংরেজিতে গানম্যান বা বডিগার্ড উভয় শব্দবন্ধে দেহরক্ষীকে বোঝানো হয়। তবে সরকারিভাবে যে দেহরক্ষী দেওয়া হয় তাদের দাফতরিক ভাষায় বলা হয় গানম্যান। মূলত এরা পুলিশ সদস্য হয়ে থাকেন। এর বাইরে যারা আবেদন করে দেহরক্ষী রাখেন অনুমোদন দেওয়ার সময় সরকারি ভাষায় তাদের বলা হয় রিটেইনার—যার আভিধানিক অর্থ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বিশ্বস্ত সঙ্গী বা অনুচর।
দেহরক্ষী পেয়ে থাকেন কারা
সরকারিভাবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ন্যস্ত তাকে সরকারের ওপর। এ কারণে তাদের নিরাপত্তায় সরকার গানম্যান নিয়োজিত রাখে। পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বর্তমানে সাদা পোশাকে ২৯২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা কখনও বাড়ে, কখনও কমে। সাংবিধানিক পদবিধারীগণ, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের লোকজন ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন সরকারি গানম্যান পাওয়ার তালিকায়। তবে অনুমোদন নিয়ে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কত ব্যক্তি গানম্যান রাখছেন তার তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
গানম্যান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবরা পুলিশ প্রটেকশন কিংবা গানম্যান পেয়ে থাকেন। তবে এদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে পোশাকি পুলিশ সদস্য। আর সাংবিধানিক পদবিধারীরা পেয়ে থাকেন সাদা পোশাকে ‘গানম্যান’। তারাও পুলিশ সদস্য।
কীভাবে গানম্যান বা দেহরক্ষী পাওয়া যায়
ক) রহিম সাহেব একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। সমাজে সুনাম আছে। অর্থ বৈভবও অনেক। হঠাৎ কেউ তাকে বিশেষ কোনও কারণে হুমকি দিলো। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। নিজের নিরাপত্তা বাড়াতে তিনি বিজ্ঞাপন দিয়ে দেহরক্ষী নিয়োগ দিলেন। এখন আর তার কোনও ভয় নেই।
খ) করিম সাহেব আরেকজন উঠতি শিল্পী। কিছু পয়সা হয়ে যাওয়ায় তার মনে হলো এখন একজন গানম্যান রাখা উচিত। ব্যাস তিনিও একজন গানম্যান রেখে দিলেন। শত্রুর মুখোমুখি কখনও হোন বা না হোন স্ট্যাটাস তো বাড়লো।
গ) মামুন সাহেব একজন অধ্যাপক। প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার চর্চা করেন। হঠাৎ একপক্ষ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলো। এখন তার উপায় কি? তার তো পয়সাকড়ি তেমন নেই যে নিয়োগ দিয়ে দেহরক্ষী রাখবেন। তাহলে কি কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারায় তাকে প্রাণটাই খোয়াতে হবে?
ওপরের তিনটি ঘটনা ভিন্ন পরিস্থিতির তিনটি উদাহরণ মাত্র। তবে সমাজে দেহরক্ষী রাখা বা পাওয়ার ঘটনাগুলো মূলত এমন পরিস্থিতির কারণেই ঘটে থাকে। এছাড়াও ব্যবসায়িক লেনদেনের নিরাপত্তাসহ অন্য আরও অনেক কারণও আছে। তবে এমন কিছু হলেই সাধারণত ব্যক্তি পর্যায়ে দেহরক্ষী রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেই কেউ দেহরক্ষী রাখতে পারবেন না। ক ও খ উদাহরণের দিকে তাকান। নিজের ইচ্ছায় রহিম বা করিম সাহেব যদি এমন কিছু করেন, উল্টো বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে তাদের। কারণ, দেশে অনুমতি ছাড়া গানম্যান রাখা আইনত নিষিদ্ধ। গানম্যানের হাতে অস্ত্র থাকবে। সেই অস্ত্র ও এর ব্যবহারকারী সম্পর্কে সব তথ্য জানতে চাইবে রাষ্ট্র। তাই দেহরক্ষী বা গানম্যান যদি প্রয়োজন হয় তাহলে যার প্রয়োজন তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনের গুরুত্বও প্রমাণ করতে হবে। তৃতীয় উদাহরণের ব্যক্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই তাকে সহায়তা করতে পারে, তবে তাকেও বিষয়টি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘কেউ চাইলেই পুলিশ প্রটেকশন কিংবা ব্যক্তিগতভাবে গানম্যান রাখার নিয়ম নাই। তবে কেউ যদি আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হন যে তার গানম্যান প্রয়োজন, তাহলে সরকারিভাবেই গানম্যান দেওয়া হয়। এছাড়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। আর ওই আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা বা বহন করার জন্য আলাদা ব্যক্তিরও অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন বিত্তবানরা নিজের খরচে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন।’
তিনি আরও জানান, ‘ বিশিষ্ট কোনও নাগরিক যদি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকেন বা হুমকি পেয়ে থাকেন তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আবেদন পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেটা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দিয়ে ‘থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট’ করা হয়। এসময় খতিয়ে দেখা হয় তিনি কোন ক্যাটাগরির ব্যক্তি, তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাসহ আনুষাঙ্গিক স্ট্যাটাস কেমন, তিনি সত্যিই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন কিনা। অর্থনৈতিক কোনও কারণে যদি কারও গানম্যান বা দেহরক্ষীর প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আর সব কিছুর সঙ্গে দেখা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কত টাকা ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। সব কিছু মিলে তদন্ত হয়। তদন্ত শেষে সার্বিক বিবেচনায় পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সন্তুষ্ট হলে পোশাকি কিংবা সাদা পোশাকের সশস্ত্র গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।’
গানম্যান বা বডিগার্ড প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা পুলিশ প্রটেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর কেউ নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বিধি অনুযায়ী তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মাসুদুর রহমান আরও বলেন, শুধু আবেদন নয়, সরকার যদি মনে করে কারও নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি, তখন সরকারের উদ্যোগেই সেই ব্যক্তির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে থাকায় অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, লেখক ও কলামিস্ট শাহরিয়ার কবিরসহ অনেককেই সরকার গানম্যান দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার আরও কয়েকজন সাক্ষীকে সরকার গানম্যান সুবিধা দিচ্ছে। দু’বছর আগে প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকেও কিছুদিন গানম্যান সুবিধা দেওয়া হয়। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া মধুসূদন ঘরামির জন্য পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও করে সরকার। আবার, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিপদমুক্ত হয়েছেন মনে করলে গানম্যান সুবিধা প্রত্যাহারও করা হয়। সরকারিভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গানম্যান দেওয়া এবং সময় বুঝে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত একান্তই সরকারের।
মূলত কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের গানম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের আগ্নেয়াস্ত্রও পুলিশ বাহিনী থেকে সরবরাহ করা হয়। গানম্যানদের আলাদাভাবে ৩০ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
আর ব্যক্তিগতভাবে যেসব ব্যক্তি গানম্যান রাখতে চান তারা সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গানম্যান রাখেন এবং সরকারের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলেন। কোনও ব্যক্তি সচ্ছল হলে একাধিক গানম্যানের আবেদন করতে পারেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা দেওয়াও হয়। বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিই একাধিক গানম্যানের প্রহরা নিয়ে সার্বক্ষণিক চলাফেরা করে থাকেন।
গানম্যানের আবেদন যেভাবে করা যায়
ব্যক্তিগত বডিগার্ড ও অস্ত্রের লাইসেন্সের অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত ছক ও নিয়মানুযায়ী আবেদন করতে হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) বরাবর। আবেদনের পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের মাধ্যমে আবেদনকারী সম্পর্কে যাচাই করে থাকেন। পরে আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তার অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত হন। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অস্ত্র ও এর ব্যবহারকারী সম্পর্কে অনুমতি দেন। লাইসেন্স করা অস্ত্র অন্য কেউ ব্যবহার করলে তার সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে ও তদন্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মো. আবু বকর ছিদ্দীক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে যার মতো সরকারের নিয়ম মেনে বডিগার্ড বা রিটেইনার নিতে পারেন। নিয়মানুযায়ী অস্ত্রের লাইসেন্সও এর ব্যবহারকারীর অনুমতি নিয়ে বিত্তবানরা বডিগার্ড রাখেন। সেই ব্যাপারে আমাদের কোনও আপত্তি নাই। যেমন একটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে যাচ্ছে, আসছে। এক্ষেত্রে আমরা অস্ত্রের অনুমতি দিচ্ছি। অস্ত্র কে চালাবে সেটা তারা নিয়োগ করবে অনুমোদন নিয়ে। এটা ব্যক্তিগত বিষয় নয়। আবার আপনাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত কারণে। বিত্তবানরা গানম্যান বা বডিগার্ড কীভাবে রাখবেন, সেটাও তাদের বিষয়। অস্ত্রের লাইসেন্স, সেটার ব্যবহারকারী সম্পর্কে সরকারের সব নিয়ম মেনে তারা বডিগার্ড রাখেন।
ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোনও বডিগার্ডকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। আমরা আবেদনকারীকে রিটেইনার লাইসেন্স দিয়ে থাকি। যিনি অস্ত্র চালাবেন বা ব্যবহার করবেন। সেই অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য যিনি আবেদন করেন, তদন্ত করে যদি আমাদের মনে হয় এটা বিধি সম্মত, তাহলে আমরা লাইসেন্স দিয়ে থাকি। যার কাছে অস্ত্র থাকবে বা যিনি ব্যবহার করবেন, তার বিষয়েও তদন্ত হয় এবং আমরা তার অফিসিয়ালি সাক্ষাৎকার নেই। মূলত রিটেইনার বা বডিগার্ড লাইসেন্স হচ্ছে, যার অস্ত্র তিনি ব্যবহার করবেন না। তার একজন লোক থাকবে। সেই লোক সেই অস্ত্র ব্যবহার করবেন। তার ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে। এ ধরনের লাইসেন্স নিয়মিতই দেওয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন