পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। শিক্ষকদের নিকট থেকে ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের ইতিহাস শুনেছে। আবার বাড়িতে আইস্যা (এসে) পুস্তকে শহীদ মিনারের ছবি দেখে ও ছবি আঁকে।
২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে এ ইতিহাস পড়ার পর থেকেই বায়না ধরছে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবে। কিন্তু স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় ছেলের স্বপ্ন পুরনে বাড়ির ওঠানেই কলাগাছ ও রং বে রংয়ের কাগজ লাগিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিয়েছি।
এসব কথা জানালেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চর বিনানই পশ্চিম পাড়ার ক্ষুদে স্কুলছাত্র আবু তালহার মা রিনা খাতুন। তালহার বাবা ফারুক হোসেন কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বৃহস্পতিবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দেশজুড়ে যখন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে। ঠিক তখনই যমুনা বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরবিনানই পশ্চিম পাড়া আবু তালহাদের বাড়ির উঠানে কাকডাকা ভোর থেকে চলছে বাঁশ ও কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ।
একাজে এলাকার শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেছে। সকালেই এলাকার বিভিন্ন বয়েসের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে গাছের ফুল এনে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেছে। দিনভর ছিল মানুষের ভিড়।
আবু তালহা যুগান্তরকে জানায়, আমি শিক্ষক ও বাবা মায়ের কাছে ভাষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আবদুল মতিনসহ ভাষা সৈনিকদের সংগ্রামের ইতিহাস শুনেছি। তাদের বহু কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা পেয়েছি। আমরা চর এলাকার মানুষ, তাই সুন্দর কোনো শহীদ মিনার নাই। বড় হয়ে একটি দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার গড়বো। শহীদ দিবসে সবাই একসাথে শ্রদ্ধা জানাবো।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, আবু তালাহা বাড়ির উঠানে যেমন শহীদ মিনার তৈরি করেছে। ঠিক এরকম আরেকটি শহীদ মিনার তৈরি করেছে মিটুয়ানী গ্রামের জনাব আলী মণ্ডল। তার প্রতিবন্ধী ছেলে গোলাম মোস্তফার আবদারে। প্রতিবন্ধী গোলাম মোস্তফা মিটুয়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি এলাকায় এরকম কলা গাছের শহীদ মিনার তৈরি করে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করে আসছে বহুদিন ধরে।
স্থানীয় সাংবাদিক মাজেদুল ইসলাম জানান, অবহেলিত চর এলাকায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এজন্য এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বাড়ির উঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদ দিবস পালন করছে। সারাদেশে দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার থাকলেও ভাষা মতিনের এলাকায় বরাবরই অবহেলিতই রয়ে গেল।
এবিষয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির জানান, চৌহালীতে গত ৫ বছরে যমুনার ভাঙনে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহীদ মিনার নদীতে বিলীন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের স্মৃতি রক্ষার্থে চৌহালীতে দৃষ্টি একটি নন্দন শহীদ মিনার নির্মাণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন