বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিবিএ নেতা স্টেনো-টাইপিস্ট মোঃ আলাউদ্দিন মিয়ার দখল থেকে দামী পাজেরো উদ্ধারের ঘটনা প্রচার হওয়ায় দুদকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোমবার পিডিবির সেই গাড়ি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারের পর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানান জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের এই নেতা।
উল্লেখ্য, মো. আলাউদ্দিন মিয়া ১০ বছর ধরে অন্যায়ভাবে দখলে রেখেছিলেন সরকারি একটি পাজারো গাড়ি।
গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদ বার্তায় আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘চাকুরির পদ-পদবী বা অবসার গ্রহণকারী একজন কর্মচারী হিসেবে আমি গাড়ি ব্যবহার করি নাই। আমি নির্বাচিত সিবিএর সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই সাংগঠনিক ও বোর্ডের কাজের প্রয়োজনে গাড়িটি ব্যবহার করেছি মাত্র। আর গাড়িটি বোর্ডের তরফ থেকে ব্যবহারের জন্য আমাকে দেওয়া হয়েছে।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দুদক পিডিবির সিবিএ নেতা আলাউদ্দিন মিয়ার কাজ থেকে গাড়ি জব্দ করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং দুদকের মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান যাচাই-বাছাই না করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। এর মাধ্যমে আমার সুনাম দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে’।
‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি স্পর্শকাতর, যার পরিধি দেশব্যাপী। আমি সিবিএর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সাংঠনিক প্রয়োজনে বোর্ডের তরফ থেকে গাড়িটি ব্যবহারের জন্য আমাকে দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবাদ বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ সিবিএর এর সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন মিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তি। আমি জীবনে আমি কখনো বেআইনি কাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। চাকুরির পদ-পদবী অনুযায়ী এবং অবসারে পরেও আমি গাড়ি ব্যবহার করতে পারি কিনা তাও আমার জানা। চাকুরি থেকে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ অবসর গ্রহণ করলেও আমি এখনো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচিত সিবিএর সাধারণ সম্পাদক। চাকুরির পদ-পদবী বা অবসর গ্রহণকারী একজন কর্মচারী হিসেবে আমি গাড়ি ব্যবহার করি নাই। আমি নির্বাচিত সিবিএর সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই সাংগঠনিক ও বোর্ডের কাজের প্রয়োজনে গাড়িটি ব্যবহার করেছি মাত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন বোর্ড থেকে আমি গাড়িটি জোরপূর্বক বা চাপ সৃষ্টি করে নিয়েছি কিনা? গাড়ি ব্যবহারের জন্য আমাকে মৌখিক বা কোনো পত্র মারফত নিষেধ করা হয়েছে কিনা? দুদকের পক্ষ থেকে কখনো আমাকে এ ব্যাপারে কোনো পত্র দেওয়া হয়েছে কিনা? এই গাড়ির ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা দুদকের পক্ষ থেকে কখনোই মৌখিক বা কোনো পত্র না দিয়ে আমি গাড়িতে না থাকা স্বত্ত্বেও আমার কাছ থেকে গাড়ি জব্দ করার সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও যেভাবে প্রচার করা হয়েছে, তাতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে এবং আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করি।’
উল্লেখ্য, অভিযানকালে দুদক টিম জানতে পারে, প্রতিমাসে গাড়িটির জন্য ডিজেল বরাদ্দ হয় ৪৫০ লিটার, যার আর্থিক মূল্য ২৯ হাজার ২৫০ টাকা। এ হারে প্রতি বছরে জ্বালানি বাবদ ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ হয়। এভাবে সিবিএ নেতা আলাউদ্দিন ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে গাড়িটির জন্য পিডিবি থেকে ডিজেল খরচ তুলেছেন ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসের ড্রাইভারের বেতন বাবদ ৪১ হাজার টাকা খরচ হয়। এ পর্যন্ত এ গাড়ির ড্রাইভারকে ৩৭ লক্ষাধিক টাকা বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিমাসে গাড়িটির পেছনে ১০ লিটার মবিল এবং মেরামত ব্যয় হয়েছে।
দুদক টিম আরও জানতে পারে, গাড়িটির লগ বইয়ে আলাউদ্দিন মিয়া স্বাক্ষর করেন না, করেন পিডিবি’র একজন কর্মচারী।
আলাউদ্দিন মিয়া ২০১৭ সালের আগস্টে অবসরে যান। তিনি তখন পিডিবির নকশা ও পরিদর্শন পরিদপ্তরের স্টেনো টাইপিস্ট পদে ছিলেন। গত আগস্টে তার অবসরোত্তর ছুটির (পিআরএল) সময়সীমাও শেষ হয়েছে।
এ অভিযান প্রসঙ্গে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘৩য় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে গাড়িটি ২০০৯ সাল থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির পেছনে গত ৯ বছরে জ্বালানি তেল, মেরামত এবং গাড়িচালকের বেতন বাবদ প্রায় সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আইনত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কোনোভাবেই ফুল টাইম গাড়ি পান না। এ ধরনের আইন অমান্যতা প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ধ্বংস করার শামিল, যা ছোট দুর্নীতি থেকে বড় দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করে। দুদক শীঘ্রই এ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে আইনানুগ পথে অগ্রসর হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন