অন্য ব্যক্তির সনদ ও বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে পাবনা শহর এবং জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা বাণিজ্য করা আলোচিত সেই ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ করিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার সকালে তাকে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ভুয়া এই চিকিৎসকের চিকিৎসা বাণিজ্য নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তিনি পাবনা থেকে পালিয়ে যান।
গ্রেফতারকৃত ভুয়া চিকিৎসকের আসল নাম মাসুদ রানা। পিতার নাম আব্দুল হান্নান। বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা পাড়া গ্রামে। তিনি ঢাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মাসুদ করিমের নাম, সনদ ও নিবন্ধন নম্বর নকল করেছিলেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান,সৈয়দপুর পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে পাবনার পুলিশ। আটকের পর তাকে সৈয়দপুর থেকে পাবনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মাসুদ রানা শুধু চিকিৎসকই নন, চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএর একজন আজীবন সদস্যও তিনি।
পাবনা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আনন জানান, ২০১২ সালের দিকে তিনি পাবনা বিএমএতে আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। সেসময় তিনি বিএমডিসির কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন, যা ভুয়া বলে কেউ বুঝতে পারেননি।
সূত্র জানায়, পেশায় আল্ট্রাসনোগ্রামের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে মাসুদ করিম পাবনা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক দশক ধরে চিকিৎসা বাণিজ্য করে গেছেন দাপটের সঙ্গে।
অন্যের নাম এবং বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে ডাক্তার সেজে রোগীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসলেও বিষয়টি সম্প্রতি যুগান্তরের অনুসন্ধানে ওঠে আসে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার শরৎনগর বাজারে হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামে একটি ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে তিনি উচ্চ বেতনে কর্মরত ছিলেন।
প্রকৃত চিকিৎসক কে?
এদিকে একই নামের প্রকৃত চিকিৎসক মাসুদ করিম ঢাকার একটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে। তিনি গত ২৫ জানুয়ারি পাবনার সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দিলে এ নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম ৮ বছর আগে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিক লিমিটেডে আলট্রাসনোলজিস্ট ও আবাসিক চিকিসক হিসেবে যোগ দেন। ক্লিনিক মালিক সেখানে তার বেতন ধার্য করেন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি ল্যাবের ‘উপরি’বা কমিশন তো পানই। ওই ক্লিনিকে কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম বিএমডিসি নিবন্ধন নাম্বার ৩৩৩৬০ ব্যবহার করে ক্লিনিকে রোগী দেখার পাশাপাশি আলট্রাসনোগ্রাম করতেন।
প্রকৃত চিকিৎসক ডা. মাসুদ করিম জানান, তিনি ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তার বিএমডিসি নং এ-৩৩৩৬০।
ডা. মাসুদ করিম যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার খিলগাঁওয়ে নিজস্ব চেম্বারে আমি দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করি। অতি সম্প্রতি জেনেছি আমার নাম-পরিচয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একই নামে একজন ভুয়া চিকিৎসক সেজে ক্লিনিকে চাকরি করছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন শাখায় মৌখিকভাবে আমি জানিয়েছি এবং পাবনার সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এরপর তিনি ওই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলে জানান।
এরপর বিষয়টি নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৬ জানুয়ারি একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপা হলে ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ করিম পালিয়ে যান।
পরে আসল চিকিৎসকের মামলার বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামেন পুলিশ। এরই এক পর্যায়ে সোমবার নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানাকে আটক করে পাবনার পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন