শত্রুর সঙ্গে প্রেম, মোহ কাটাতে আড়াই বছর বন্দি সুমি
পরিবারের সন্দেহ, শত্রুপক্ষের সঙ্গে প্রেম করছেন তাদের মেয়ে। ফেরাতে স্বপ্নে পেলেন তান্ত্রিক।
তার দ্বারস্থ হলে পরামর্শ দেয়া হয়, অন্ধকার ঘরে আটকে রাখতে হবে, বাইরে বেরুতে দেয়া যাবে না। যে কথা, সেই কাজ। অন্ধকার কক্ষে আটকে ফেলা হলো মেয়েকে, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, সবকিছু। সঙ্গে চলতে লাগল কবিরাজের নতুন নতুন টোটকা।
অন্ধ প্রকোষ্টেই এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ আড়াই দুই বছর। এতে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নের সুমি আক্তারের (২২) প্রেমের মোহ কেটেছে কিনা, এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে, এই সময়ে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে আড়াই বছর। জীর্ণ-শীর্ণ দেহে দাঁড়ানোর শক্তি পর্যন্ত নেই। বলা চলে জীবিত থেকেও মৃত সুমি!
প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান সুমি। পরে তাকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সুমি ২০১১ সালে রংপুরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং নবাবগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১৬ সালের মাঝামাঝি তার জীবনে নেমে আসে এই অমানিশা।
প্রতিবেশীরা জানায়, ওই পরিবারের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন এক পরিবারের ছেলের সঙ্গে সুমি প্রেম করছে— সন্দেহের বশে মা তাকে আটকে রাখেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও তার ঘরের লাইন কেটে দেয়া হয়। ঘরের দরজা-জানালাও সব সময় তালা মেরে রাখা হতো।
উদ্ধারের পর দেখা যায়, দীর্ঘ বন্দিদশায় সুমির হাত-পায়ের আঙুল কুঁকড়ে গেছে। শীর্ণ শরীরে বাসা বেধেছে চর্মরোগ। দেখা দিয়েছে রক্তশূন্যতা।
সুমির মায়ের দাবি, কবিরাজ ও স্বপ্নে দেখা এক ব্যক্তির পরামর্শেই তিনি মেয়েকে এভাবে ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএস ডা. খাইরুল ইসলাম তপন বলেন, ‘দুই বছরেরও বেশি সময় অন্ধকার ঘর বন্দি থাকায় সুমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। চিকিৎসা শুরুর পর ধীরে ধীরে তার উন্নতি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সুমি এখন উঠে দাঁড়াতে পারছে, একটু একটু কথাও বলছেন। হাত-পায়ে পুরোপুরি শক্তি আসতে সময় লাগবে। তবে, তিনি শঙ্কামুক্ত।’
হাসপাতালের ডা. আল-আমিন কাজি জানান, সুমিকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে। ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে। অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল।
বিনোদনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে ওই তরুণীর চাচা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন। সে সময়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন