চট্টগ্রামে ভাবিকে হত্যার ঘটনায় দেবর মো. ফরহাদ হোসেন লিমন (২২ কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে লিমন। লিমন পুলিশকে জানায়, টাকা চেয়ে না পেয়ে ভাবিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে পুলিশকে জানান লিমন।
লিমন তার ভাবিকে হত্যার পর বাসা থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান মালামাল লুট করে। পরে এ ঘটনা ভিন্নখানে নিতে এবং নিজেকে বাঁচাতে চুরির ঘটনা সাজায় বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে। আর এসব পরিকল্পনা করেছে ধারাবাহিক হিন্দি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে। চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানা এলাকায় ৪ দিন আগে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া লিমন এ তথ্য জানায়।
সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ এসব তথ্য তুলে ধরেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
তিনি জানান, ভাবির কাছে টাকা চেয়েছিল দেবর। কিন্তু পায়নি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ভাবিকে খুন করে স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায় সে। এরপর এ ঘটনাকে চুরি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টাও চালিয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর আকবরশাহ থানাধীন কালিহাট এলাকার ইদ্রিস সওদাগরের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন গার্মেন্টস শ্রমিক হাসিনা বেগম (৩২)। তার স্বামী সৌদি প্রবাসী এবং একমাত্র ছেলে আবির হোসেন (১২) পাহাড়তলী নেছারিয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। একই বিল্ডিংয়ে ব্যাচেলর হিসেবে থাকতো তার দেবর মো. ফরহাদ হোসেন লিমন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হাসিনার বেগমের লাশ পাওয়া যায় বাসায়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হাসিনার ভাই মো. মানিক বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি বোনের দেবর ফরহাদ হোসেন লিমনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্দেহজনক দায়ী করেন।
এজহার দায়েরের পর পুলিশ গত ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে লিমন পুলিশকে হত্যার দায় স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।
ফরহাদ হোসেন লিমন জানায় সে নিয়মিত ভারতীয় ধারাবাহিক ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখতো। ক্রাইম পেট্রোলে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের কেস স্টাডিগুলো দেখানো হয়। সেখান থেকে দেখে ভাবিকে খুন করে এ ঘটনাকে চুরি হিসেবে সাজাতে চেষ্টা করে।
লিমনের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারী হাসিনা বেগম গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরে তার বসত ঘরের পাশে রান্নাঘরে খাওয়ার পানি গরম করতে যায়। এই অবস্থায় দেবর ফরহাদ হোসেন লিমন টিভি দেখার কথা বলে তার ঘরে আসে। পানি গরম করে হাসিনা বেগম নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়লে লিমন ঘুমন্ত অবস্থায় দুই হাত দিয়ে গলা চেপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। হত্যা করার পর তার শরীরে পরিহিত স্বর্ণালংকার, মোবাইল নিয়ে হাসিনা বেগমের মরদেহ বাসার বাইরে আরেকটি কক্ষে তালা মেরে রেখে পালিয়ে যায়।
পুলিশকে সে জানায়, তার ভাবি হাসিনা বেগমের কাছে প্রায় সময় টাকা পয়সা চাইলে ভাবি তাকে কোন আর্থিক সহায়তা করতো না। আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় তার মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে। সেজন্য টিভি দেখার নাম করে মনে মনে মূলত ভাবিকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
পুলিশ তার দেয়া তথ্যমতে ১ জোড়া বড় স্বর্ণের দুল, ২ জোড়া ছোট স্বর্ণের কানের দুল, ১টি স্বর্ণের নাকের নথ, স্বর্ণের বেসলেট ১টি, ১ জোড়া ছেঁড়া স্বর্ণের চেইন, ১ টি স্বর্ণের লকেট, ১ জোড়া রূপার পায়ের নুপুর উদ্ধার করেছে।
নিহত হাসিনা বেগম নোয়াখালীর শফিগঞ্জ এলাকার পশ্চিম মাইজচরা গ্রামের মেয়ে। পেশায় পোশাক শ্রমিক হাসিনা আকবর শাহ থানাধীন কালির হাট ১ নম্বর গলিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আসামি লিমন চাঁদপুরের পাইকপাড়া এলাকার আবুল কাশেম পাটোয়ারীর ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মো. কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) পংকজ বড়ুয়া, আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন