একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনের পর এবার আলোচনায় সামনে এসেছে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী (মহিলা) আসনের বিষয়টি। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের সদস্য (এমপি) হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক প্রত্যাশায় রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ে এবার সাতক্ষীরা (৩১২) সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে সরব অ্যাডিশনাল ডিআইজি র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুর কবীর এর স্ত্রী চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর।
উপজেলার বিভিন্ন পরিবেশে আলোচনার টেবিলে সবার মুখে তার নামই চলে আসছে বলে জানা গেছে। বিগত সময়ে দলের নানা কর্মসূচিতে তার নিয়মিত উপস্থিতিই তাকে এগিয়ে রাখছে বলে মন করছেন স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভানেত্রী নূরজাহান মঞ্জুর বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি, রংপুর ওমেন চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র কার্যকরী সদস্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি ঢাকা’র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমি সবসময়ই আদর্শ হিসেবে মেনেছি এবং মনেপ্রাণে তাঁর আদর্শকেই ধারণ করি এবং বাকি জীবন তাঁকেই অনুসরণ করবো। ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিএনসিসিসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে সরাসরি থাকা হয়নি। তবে বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির-বিএনপি চক্র অরাজকতা সৃষ্টি করে এবং একের পর এক খুনসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলার পর আমার স্বামী ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার হিসেবে সাতক্ষীরায় যোগদানের মাত্র সাত দিনেরও কম সময়ের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা পালিয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে সাতক্ষীরা জেলায় বিন্দুমাত্র সহিংসতা ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’
নূরজাহান মঞ্জুর আরও বলেন, ‘যে সাতক্ষীরায় সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছিল বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ, আমার স্বামীর আন্তরিকতা, দক্ষতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের কারণেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলায় কোনরূপ সহিংস ঘটনা ঘটেনি। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি যে রকম সাংগঠনিক দক্ষতা পুরো জেলাজুড়ে দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে পুরোটা সময় থেকে আমিও সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দক্ষতা অর্জন করেছি। এছাড়াও প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমগ্র সাতক্ষীরাবাসীকে উজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী হিসেবে বিজয় মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বৈশাখী মেলাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ নানাবিধ জাতীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের মাধ্যমে সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক ডিএনএ পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচার করায় সাতক্ষীরা থেকে ধীরে ধীরে মৌলবাদী রাজনীতির বিষবাষ্প উধাও হবার পথে ছিল। এসব কর্মকাণ্ড আমার মনোনয়ন সহায়কে কোনও অংশে কম নয় বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারায় একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকাটাই স্বাভাবিক। কেউই অযোগ্য নন। তবে আমি মনে করি, আমার স্বামীর সাংগঠনিক দক্ষতা সাতক্ষীরার জনগণ জানে। তার সাথে মাঠ পর্যায়ে থেকে আমিও সেসব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যোগ্যতার বিচারে আমিও কম নই। কিন্তু কাউকে ছোট করে দেখছি না।’
নিজের অবস্থান তুলে ধরে এই র্যাব কর্মকর্তার স্ত্রী বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের জন্য যতটা করা যায় তার সবই আমি নিষ্ঠার সাথে করবো। তবে দায়িত্বের বাইরেও নিজ উদ্যোগে সর্বস্তরের নারী সমাজকে সাথে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে নজর দেবো। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নই তো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত। সেদিকে অবহেলা করার তো কোন সুযোগই নেই।’
তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরার নারী সমাজকে যাতে অপসংস্কৃতি-সাম্প্রদায়িকতা-অনাচার-উশৃঙ্খলতা স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে আমি একটা স্বপ্ন দেখি, একদিন পুরুষের মত সাতক্ষীরার নারীরাও দিনরাতের যে কোনও সময় স্বাচ্ছন্দ্যে নিরাপদে যে কোনও জায়গায় নির্ভয়ে চলাচল করতে পারবে।’
‘আমি সাতক্ষীরার নারী সমাজের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সাতক্ষীরার সকল নারীকে স্বাবলম্বী করতে, দারিদ্র্যের সংস্কৃতি থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চাই। পাশাপাশি সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চর্চার মাধ্যমে সাতক্ষীরা হতে সকল কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূর করতে ও সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য নির্মূল করতে চাই’- যোগ করেন মঞ্জুর।
এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরার মানুষের যেসব সমস্যা আছে, তা প্রায় সবাই জানে। তাই সমস্যা যাই থাকুক না কেন সাতক্ষীরার জনগণকে বা সুনির্দিষ্টভাবে যদি বলি তাহলে সাতক্ষীরার নারী সমাজকে সঙ্গে নিয়ে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সাতক্ষীরার শতভাগ নারীর যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবো ইনশাল্লাহ্।’
চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর বলেন, ‘আমার স্বামী যখন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন তার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকে দায়িত্বের বাইরেও পুরো জেলার জনগণকে এক রাখার চেষ্টা করেছেন। তখন জেলায় কোনও কোন্দল-সংঘাত ছিল না। আর তার দেখানো পথ ধরেই আমি আমার কাজ আরও ভালোভাবে করে যাবো। কেননা তখন আমার হাতে কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতাও থাকবে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন