০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে বলে বিরোধীদের এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে সরকার। আর এ কারণেই সরকারের ভেরতে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের পর দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পৃথকভাবে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে লিখিতভাবে ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছে।
পৃথক চিঠিতে তারা, নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণের চিত্র তুলে ধরেছেন।
এছাড়া নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারি-তে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগের খুটিনাটি তুলে ধরেন নেতারা। ওই বৈঠকে পশ্চিমা কূটনীতিকরাও কোনো কোনো বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
কূটনীতিক সূত্রগুলো এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে নিজ নিজ দেশের সরকারকে বার্তা পাঠিয়েছে। তাতে নির্বাচনে অস্বচ্ছতা ও জনমতের প্রতিফলন হয়নি বলেই জানানো হয়েছে।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনায় হতাহত হওয়া, বলপ্রয়োগসহ আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ উত্থাপনের ফলে নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘনের যে সব অভিযোগ গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি।
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগের কারণে নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর ভিত্তি করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই সব পক্ষের জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও নির্যাতনের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে এবং নির্বাচনের দিনও এমন হয়রানি চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বড় আশংকার বিষয় হলো, এতে করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দেশের জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ড. জামান বলেন, একটি জোটের পোলিং এজেন্টরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারার অভিযোগের বিষয়টি যেভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন তা একদিকে যেমন বিব্রতকর, অন্যদিকে তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালন করতে পেরেছে কিনা সে উদ্বেগ আরো ঘনীভূত করেছে।
ড. জামান বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির নামে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীতেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে সচিত্র প্রতিবেদন আকারে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্স নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, বহু ভোটার ভোট দেওয়ার আগেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ইত্যাদি ঘটনার প্রতিটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে টিআইবি।
ড. জামান বলছেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তদন্ত করে এসব ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করা এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা অপরিহার্য। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে আস্থার সংকটের প্রেক্ষিতে কমিশনের গৃহিত পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমাদের জোরালো আহ্বান থাকবে, এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিন।
যে অভূতপূর্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সৃষ্ট অভূতপূর্ব ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে তার আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা, আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই এই তদন্ত অবশ্যকরণীয় বলে মন্তব্য করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক।
এতে বিশ্বের প্রভাবশালী সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলোও বিষয়টি বেশ শক্তভাবেই আমলে নিয়েছে। ফলে এর প্রভাবও কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের কথাবার্তার সেটার কিছুটা প্রমাণ মিলছে। ১১ জানুয়ারী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশ স্বীকৃতি দিলেও ঐক্যফ্রন্ট নানা অজুহাত তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যতই ষড়যন্ত্র করুক তা জনগণ মেনে নেবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের বিজয় এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই আমাদেরকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ গুটি কয়েকটি রাষ্ট্র নবগঠিত সরকারকে অভিনন্দন জানালেও ইউরোপ-আমেরিকা বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।
যার ফলে বিপুল বিজয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও চরম অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার। এ নিয়ে সরকারে চরম অস্বস্থি বিরাজ করছে। তবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। ২২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
সাম্প্রতিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যু, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মূলত এই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র সচিব অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য সৌদি আরব যাবেন।
সরকারের একজন কর্মকতা বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন হয়ে গেছে এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলবো।’গত ২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে সফরের বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে সহিংসতা আর ব্যাপক কারচুপির কারণে ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ্ট নয় কেউই। সরকার নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচনে দেশে এবং দেশের বাইরে সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় বইছে। কারচুপির অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত এবং সব পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের তাগাদা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যাপক প্রচার করলেও এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমাবিশ্ব।
সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ এবং কারচুপির সুষ্ঠু তদন্তের তাগাদা দিয়ে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ নির্বাচন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নির্বাচন নিয়ে সরকারকে ‘স্বাগত’ না জানিয়ে তারা বরং অনিয়ম, কারচুপি এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করার আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে সবপক্ষকে এক হয়ে পন্থা খুঁজে বের করার তাগাদাও উঠে এসেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার দেশ এবং সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব শক্ত ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন এবং অবস্থান তোলে ধরেছেন তাতে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে বেকায়দায় পড়তে পারেন শেখ হাসিনা সরকার। বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক প্রতিবদনে এমন অভিমত তোলে ধরেছে।
‘ওয়েস্টার্ণ পাওয়ার কলস ফর প্রোব ইনটু বাংলাদেশ ইলেকশন ইরেগুলারিটিস, ভায়োলেন্স’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমাবিশ্ব। যে নির্বাচনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন জোট ৯০ শতাংশের বেশী আসনে জয়ী হয়েছে সে ভোটে সংগঠিত কারচুপির অভিযোগগুলো নিয়েও সবিস্তারে কথা বলেছে পশ্চিমাদেশগুলো।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব কড়া ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন তোলে ধরেছেন সেটি শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক কারচুপি আর ভোটারদের আতংকিত করে নির্বাচন করা হয়েছে অভিযোগ এনে এর ফলাফল প্রত্যাখান করেছে শেখ হাসিনার বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল। তবে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। তার ভাষ্যমতে ভোট ছিলো শান্তিপূর্ণ, আর তাতে উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছেন তার সমর্থকরা।
দেশে চলমান পরিস্থিতির দিকে ইংগিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবারের ঢাকার পরিস্থিতিটা ছিলো চুপচাপ। তবে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদরে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচনের দিনে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছে, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াজুড়ে ছিলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ঘাটতি। এসকল প্রতিবন্ধকতার কারণেই নির্বাচনের প্রচার এবং ভোটদান প্রক্রিয়া কলুষিত হয়েছে।”
নির্বাচনে অনুষ্ঠিত কারচুপির অভিযোগসমূহের একটি যথার্থ তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিদেশে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়েছে, হয়রানি, ভীতিকর পরিস্থিতি এবং সহিংস কর্মকান্ডের জন্যই নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিরোধী দলের প্রার্থী এবং সমর্থকেরা স্বাধীনভাবে তাদের সভা-সমাবেশ করতে পারেনি, কোনো প্রচারণা চালাতে পারেনি। এঘটনাগুলোর স্বপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে, আর তাতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র।
ভোটে বাধা দেবার বিষয়টিতে অসন্তোষ জানিয়ে দেশটি বলেছে, ভোটের দিনে সংগঠিত অনিয়মগুলোর কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। এ বিষয়টিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।কারচুপির এসব বিষয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের এ ধরনের বক্তব্যে সরকারকে কিছুটা শঙ্কিতও করেছে বটে। কেননা, পশ্চিমাবিশ্বকে এড়িয়ে চলার মতো সক্ষমতা এখনো বাংলাদেশের হয়নি। তথা গ্লোবাল ভিলেজের যুগে বিশ্বের প্রভাবশালী একটা বড় অংশকে এড়িয়ে চলা কোনো দেশের জন্য শুভকর নয়। কেননা, শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্যোগে রয়েছে বাংলাদেশের।
ফলে এ মুহূর্তে পশ্চিমা বিশ্বের মান-অভিমান ও অভিযোগকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই সরকারের। ফলে নিয়ে সরকার অনেটাই অস্বস্থিতে ভুগছে।
আর এ অস্বস্থি আরো বাড়িয়ে দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের গঠনমূলক রাজনীতি, বক্তব্য ও বিবৃতি। এবারের নির্বাচনের আগে-পরের ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা ছিল খুবই ইতিবাচক। তারা অন্যদের উস্কে দেয়া কোনো সহিংস পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারি-তে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর কূটনীতিকদের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগের খুটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে।
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা তাদের কাছে নির্বাচনের কিছু ডকুমেন্ট দিয়েছে যে নির্বাচনের আগের দিন ও পরের দিন কী হয়েছে। সেই সঙ্গে ডকুমেন্ট অনুসারে আমরা তাদের একটা পেনড্রাইভ দিয়েছি, যাতে তারা দেখতে পারেন নির্বাচনের আগের এবং পরের দিন কী হয়েছিল।
কামাল হোসেন বৈঠকের ব্যাপারেে আরো বলেন, ‘যারা এসেছিল তারা বন্ধুরাষ্ট্রের। তারা আমাদের বন্ধু, জনগণের বন্ধু এবং সরকারেরও বন্ধু। আমরা নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি। তারা এ নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি। আমরা যা দেখেছি, তারাও তাই দেখেছে। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং বলেছেন—গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাক তারাও সেটা চান। তারাও চান এদেশের মানুষ স্বস্তিতে, শান্তিতে থাক।’
একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের এমন অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। যা হবার হয়ে গেছে, এখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সরকারকে চাপ দিয়ে নয়, যুক্তি দিয়ে বোঝাক তারা’।
বিরোধীদের এসব অভিযোগ আর পশ্চিমাবিশ্বের ভূমিকাসহ সবমিলেই সরকারের এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে সরকারের কূটনীতিক পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পশ্চিমাবিশ্বের প্রভাবশালী টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারটিও ভাবছে।
অবশ্য নির্বাচনের পরের দিন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভোটে কোনো কারচুপি হয়নি। কেউই যদি প্রমাণ করতে পারে কারচুপি হয়েছে। তাহলে পুনরায় ভোট হতে তো আমাদের আপত্তি নেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন