বাংলাদেশ রেলওয়েতে অ্যাটেন্ডেন্ট সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে। এতে রেল ভ্রমণে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হলেও সমাধান পাচ্ছেন না। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটি বগিতে একজন অ্যাটেন্ডেন্ট থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে পুরো ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র তিন থেকে চারজন। রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অ্যাটেন্ডেন্ট স্বল্পতার বিষয়টি জানিয়ে শূন্যপদে জনবল নিয়োগে মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু তাতে এখনো সাড়া মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে মোট ৪৯টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে ১৬টি বগি থাকার কথা। তবে চাহিদা এবং প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে বগি কখনো কমবেশি হয়ে থাকে। আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা ম্যানুয়েলের অধ্যায় ২-এর ২.৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক বগিতে একজন করে অ্যাটেন্ডেন্ট থাকার কথা। তাদের প্রধান কাজ ট্রেনকে যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত রাখা, যাত্রীদের ওঠানামার ক্ষেত্রে সহযোগিতা, কোচ ও আসন খুঁজে দেওয়া, বৃদ্ধ নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী-অসুস্থ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, টিকিট চেকিংকালে অবৈধ যাত্রীদের চিহ্নিত করতে
সহায়তা করা। কিন্তু বর্তমানে রেলওয়েতে মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে কর্মরত অ্যাটেন্ডেন্টের হার ৩০ শতাংশের নিচে থাকায় এসব সেবা না পেয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে অনেক সময় বিনাটিকিটে একশ্রেণির মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছেন উচ্চশ্রেণির বগিতে। এতে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
রেলের কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রত্যেক বগিতে অ্যাটেন্ডেন্ট না থাকায় চোরাকারবারিরা ট্রেনকে ব্যবহার করছে। সীমান্ত এলাকায় এসিপি (অ্যালার্ম চেইন পুলিং) করে অবৈধ পণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। এতে মাঝপথে ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। আবার রাতে ট্রেনে যাত্রীদের মালামাল খোয়া যাচ্ছে, ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও।
নিয়মিত রেল ভ্রমণ করেন এমন কয়েক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলন্ত ট্রেনে হকার ও পকেটমারের উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া ভিক্ষুক ও হিজড়াদের উৎপাতেও যাত্রীরা অতিষ্ঠ। জোটবদ্ধ হিজড়ারা প্রতিদিন কোনো না কোনো ট্রেনে উঠে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা দিতে বাধ্য করছে। নইলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
রেল সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে পুরনো জনবল কাঠামো অনুযায়ী ২১৫ জন অ্যাটেন্ডেন্ট পদ মঞ্জুরি ছিল। বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন ১৫৬ জন। এর মধ্যে অনেকেই অবসরে গেছেন। মামলা ও অসুস্থতার কারণে ৩৩ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১২ জন প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৯০ জন। ঢাকা বিভাগে ৯১৫ জনের বিপরীতে কাজ করছেন ১৫০ জন। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগে ১৩৫ পদের মধ্যে কর্মরত ৮৯ জন। লালমনিরহাট বিভাগে ১০০ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬৬ জন। নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী পশ্চিমাঞ্চলেও ১ হাজার ২০০ অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) কাজী রফিকুল আলম বলেন, অ্যাটেন্ডেন্ট না থাকায় যাত্রীসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা দ্রুত নিয়োগ দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা নতুন জনবল কাঠামোয় নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন