রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় মর্মাহত তার সহপাঠীরা, মর্মাহত তার পরিবার। অরিত্রির পুরনো স্মৃতি আর জিনিসপত্র হাতড়ে কাটছে তার মা-বাবার দিন। পৃথিবীর কোনও সান্ত্বনাই শান্ত করতে পারছে না সদ্য বুকের মানিক হারানো এই বাবা-মাকে।
পরিবারের বরাতে জানা যায়, মেধাবী ছাত্রী ছিলেন অরিত্রি অধিকারী। স্বভাবে ছিল চটপটে আর প্রাণবন্ত। এমনকি ভিকারুননিসার ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয় সে। এরপর আর পিছেনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সবসময় ভালো ফলাফল ছিল তার সঙ্গী। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সে ছিল সমানভাবে পারদর্শী। দুই বোনের মধ্যে অরিত্রি ছিল বড়, তার ছোট বোনও ভিকারুননিসার ছাত্রী।
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি মন্দিরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত অরিত্রি অধিকারীর বাবা দিলীপ অধিকারী। তিনি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তার চোখের জল পড়ছিল গাল বেয়ে।
কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, কখনও আশা করিনি যে মেয়ের মরদেহ এভাবে কাঁধে করে নিতে হবে। আমি জানি এটা কত কষ্টের। আমি তো আর মেয়েকে ফিরে পারো না। আমরা সবাই চাইলেও পারবো না।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের আমি বলেছিলাম আমি ব্লাড প্রেসারের রোগী। আমার স্ত্রীর নিউরো সমস্যা আছে। তাই হয়তো মেয়ের যত্ন নিতে পারেনি। এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। তারা আমার কোনো কথাই শুনল না। আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিল। এই অপমান সইতে না পেরে আমার মেয়েটা আজ নেই।
দিলীপ অধিকারী বলেন, বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ যে আমার মেয়েকে সঠিক দিকনিদের্শনা দিতে পারেনি। তা না হলে পরীক্ষার হলে মোবাইল টা নিয়ে গেল কেনো...।
শিক্ষা সচিব ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশে না করে দিলীপ অধিকারী বলেন, আমাকে তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন রুমে নিয়ে বলেছে আপনি কি চান? আমাদের কাছে সত্যি কথা বলেন। আমরা আপনার মাধ্যমে স্কুলের কিছু জঞ্জাল ছাপ করবো। আমি বার বার বলেছি আমাকে ভুল বুঝবে না। আমি যা বলতেছি সত্যি বলতেছি।
তিনি বলেন, আমি আর ওই স্কুলে কখনও যাবো না। আমার পরিবারের কেউ হয়তো যাবে না। আপনারা আমার মেয়েকে ক্ষমা করে দিবেন। ও যদি কোনও ভুল করে থাকে।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগরে ৭তলা বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অরিত্রির মরদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার পর দিন মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিন্নাত আরা ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করে একটি মামলাটি দায়ের করেন।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন