সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়ানো মাঠ, মাঝখানে ২২ গজের পিচ, চারপাশে দর্শকদের হল্লা। এমন পরিবেশের ছোঁয়া থেকে বাইরে আছেন অনেক দিন। লিগামেন্টের ইনজুরি তাকে এই জগৎ থেকে ছিটকে দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার পর মনে সাহস পাচ্ছেন সেই পরিমণ্ডলে ফেরার। স্বপ্ন দেখছেন বল হাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করবেন, আবার নিজে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের বোলারকে ঘায়েল করে বল পাঠাবেন মাঠের বাইরে।
সোয়েতা গেস্ট হাউজের দোতলার ১০৫ নম্বর রুমে কখনো শুয়ে, আবার কখনো একটু বারান্দায় স্ট্রেচারে ভর করে দূর আকাশের দিকে এসব কল্পনার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় চামেলী খাতুন। বুকে আশা বাঁধছেন নিজেকে আবার স্বরূপে ফেরাতে পারবেন।
ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর শীর্ষ পর্যায়ের স্পর্শ বেসরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালে রাজশাহীর মেয়ে চামেলীর ডান পায়ের লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। অস্ত্রোপচার শেষে প্রতিদিনের ড্রেসিং আর সেলাই কাটার অপেক্ষায় হাসপাতালের ঠিক দক্ষিণে দুই মিনিটের হাঁটা পথে সোয়েতা গেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন আর মনে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। তার আশা ডাক্তার দীর্ঘ ছয় মাসের যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। যা তাঁকে মাঠে ফেরাতে সাহায্য করবে।
চামেলীর ভাগ্নি মুশফিকা রোজি, ডা. প্রশান্ত তেজওয়ানির বরাত দিয়ে জানালেন, চামেলীর পায়ের কন্ডিশন ভালো হচ্ছে। পুরোপুরি সারতে ছয় মাস লাগবে। ছয় মাস পর পায়ে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে পারবেন। এ সময় কালিন তাকে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে হাঁটতে হবে। লিগামেন্টের টিস্যুগুলো এই সময়ের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে আবারও হাসপাতালে আসতে হবে কি না সেই বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে চামেলীকে ধরে নিয়ে চলাফেরা করলেও নিজে চেষ্টা করছেন নড়াচড়ার। মানসিকভাবে তিনি এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ড্রেসিং করার জন্য। আজ-কালের মধ্যে সেলাই কাটা হতে পারে। ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোজি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য-সহযোগিতা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা খরচ চলছে। রাজশাহী থেকে ব্যাঙ্গালুরু পর্যন্ত আসা-যাওয়ার প্লেনের খরচ বহনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
চামেলী খাতুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই সব মানুষের সহযোগিতা না পেলে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা তার পক্ষে করা সম্ভব হতো না। বর্তমানে ভালো আছেন। তিনি রাজশাহীসহ দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন। প্রত্যাশা করছেন সুস্থ হয়ে আবারও মাঠে ফিরতে পারবেন।
উল্লেখ্য, চামেলীর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছিলেন রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়ার জরাজীর্ণ একটি ঘরে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ান। এ সময় তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে ঢাকা নিয়ে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতালে) ২১৬ নম্বর কেবিনে। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালেই চিকিৎসার প্রস্তুতি শরু হয়। কিন্তু চামেলী দাবি করেন ভারতে চিকিৎসার জন্য। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ভারতে।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়ে বেড়িয়েছেন চামেলী খাতুন। ২০১০ সালের এশিয়া কাপের রানার আপ হওয়া দলের হয়ে মাঠ মাতান এই দাপুটে ক্রিকেটার। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। সেই তিনিই পরাস্ত হন ইনজুরিতে। এখন তার চিকিৎসা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন